নগরে দিনে তিনটি অগ্নিদুর্ঘটনা

অগ্নিকান্ড। প্রতীকী ছবি
অগ্নিকান্ড। প্রতীকী ছবি

নগরে প্রতিদিন ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে প্রায় তিনটি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। সব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না থাকলেও সম্পদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে তুলনায় অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীবাসী অগ্নিদুর্ঘটনার চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন।

ঢাকা শহরে নিয়ম না মেনে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, ভবনের অন্দরসজ্জায় দ্রুত দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের প্রবণতা এবং কর্মস্থল ও বাসায় ইলেকট্রনিকসামগ্রী ব্যবহার বাড়ার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে বলে ধারণা অগ্নিনির্বাপণ কর্তৃপক্ষের।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীতে ২৩৪টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। কেবল জানুয়ারি মাসেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ১০০টি। এক দিনে সর্বোচ্চ সাতটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফ আর টাওয়ারের দুর্ঘটনায় অন্তত ৯৭ জন মারা গেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি না হলে তা গণমাধ্যমে আসে না। সম্প্রতি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় এবং বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়টি সামনে এসেছে।

শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি বেশি

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগে। এতে হাসপাতালের ভবনের এবং সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি হয়। রোগীদের অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নিতে গিয়ে নানা দুর্ভোগ হয়। হাসপাতালে দুর্ঘটনার ছয় দিন পরে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। এতে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর কয়েক দিনের মাথায় লালবাগের শহীদনগরে চুড়ির কারখানায় আগুন লেগে কমপক্ষে ৫০টি দোকান ও বসতবাড়ির চারটি কক্ষ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। আবার গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন। এর এক দিন পরেই ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দুই শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানায়, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে। তবে নগরায়ণের জন্য জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ায় দিন দিন বিষয়টি মানুষ আমলে নিচ্ছে।

অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসেবে শাকিল নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণে ব্যত্যয়, ভবনের অন্দরসজ্জায় ত্রুটি, কর্মস্থল ও বাসায় বৈদ্যুতিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ঘন বসতি বড় কারণ। তিনি আরও বলেন, শহরের মানুষ চরম অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে শহর মৃত্যুকূপে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, বনানীর ভবনটি তৈরিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তার ব্যাপারটি যথাযথভাবে আমলে নেওয়া হয়নি। একটু সচেতন থাকলে প্রাণহানি হয়তো এড়ানো যেত। হাসপাতাল, বস্তি, বসতবাড়ি, বিপণিবিতান থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গাতেই অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। তবে শহরের বেশির ভাগ ভবনেই অগ্নিপ্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো ভবনে অবশ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা আছে। তবে সেগুলোতে মেয়াদ থাকে না। আবার মানুষও তার ব্যবহার জানে না। পানির সংকট উল্লেখযোগ্য। অথচ পানি আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপকরণ।

ফায়ার সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের সচেতনতার খুব অভাব। প্রথমত, তারা ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধে ব্যবস্থা রাখে না। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করতেও জানে না।