ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের

থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, ওসিরা যেখানে–সেখানে কোর্ট বসান। রাতে কোর্ট বসান। তাঁরা নিজেরা বিচার বসান কীভাবে? এত সাহস তাঁরা কোথায় পান?

এক ব্যক্তির থানায় মামলা না নেওয়া এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসি হাবিল হোসেনের কর্মকাণ্ড নিয়ে করা এক রিটের শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন প্রশ্ন রাখেন।

আদালত বলেছেন, ১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসে, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হতে পারে না। দুই লাখ পুলিশ ভালো। অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করে। আবার দেখা যায় অনেকের চার-পাঁচটা করে বাড়ি আছে।

মারধর, লুটপাট ও সীমানাপ্রাচীর ভাঙার অভিযোগে থানায় মামলা না নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শ্যামনগরের বাসিন্দা মো. ফজলুর করিম গত ৩ মার্চ রিটটি করেন। এর শুনানিতে ১০ মার্চ হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেন। এরপর গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। গতকাল সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম জানান, মারধর, স্বর্ণালংকার লুটপাট ও সীমানাপ্রাচীর ভাঙার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে সীমানাপ্রাচীর ভাঙার ঘটনার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

 অভিযোগের কিছুটা হলেও সত্যতা আছে উল্লেখ করে আদালত বলেন, তাহলে মামলা নেওয়া হলো না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি, কেন ওসি মামলা নিলেন না? তাঁরা কি সালিস করতে বসেছেন, যে সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন, সুবিধামতো না হলে নেবেন না? অথচ টাকা ছাড়া থানায় জিডিও হয় না।

 পরে এম সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রিট আবেদনকারী পুলিশ সুপারের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার শ্যামনগর থানার ওসিকে প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। প্রতিবেদনে সীমানাপ্রাচীরের অংশবিশেষ ভাঙার সত্যতা পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনটি আগামী রোববার আদালতে দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এই সময় পর্যন্ত বিষয়টি মুলতবি রাখা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারী ফজলুর করিমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শামসুল হক কাঞ্চন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ইউসুফ আলীসহ অন্যরা গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোরা গ্রামের ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা করে। তাঁকে মারধর করে ২ লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি সোনার চেইন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেয় বলে তাঁর অভিযোগ। ঘটনার সময় শ্যামনগর থানার ওসি হাবিল হোসেনকে ফোন দিয়ে সাহায্য চান ফজলুর। তবে অন্য ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ওসি বলেন, পরে দেখবেন। এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার এক এএসআই ঘটনাস্থলে যান। ততক্ষণে হামলাকারীরা চলে যায়।

ঘটনার বিষয়ে শামসুল হক কাঞ্চন আরও বলেন, পরদিন থানায় গেলে ওসি ফজলুরের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে ২৬ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন ফজলুর। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই পুলিশ সুপার শ্যামনগর থানার ওসিকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। পরে শ্যামনগর থানার এক এসআই ওসির পক্ষে থানায় গিয়ে বসে ফজলুরকে মীমাংসা করার পরামর্শ দেন।