হাসপাতালে পানি সরবরাহ ও পরিচ্ছন্নতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে হয় না। হাসপাতালে সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈশ্বিক, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার গড় মানের চেয়ে পিছিয়ে। আর স্যানিটেশনে কিছু অগ্রগতি থাকলেও হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্যানিটেশনের অবস্থা আশানুরূপ নয়। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাও বাংলাদেশে একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।

‘স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পানি-স্যানিটেশন-পরিচ্ছন্নতার সুবিধাসংক্রান্ত বৈশ্বিক ভিত্তি প্রতিবেদন–২০১৯’–এ এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) তৈরি যৌথ পরিবীক্ষণ কর্মসূচির (জেএমপি) প্রতিবেদনটি আজ বুধবার বৈশ্বিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

 জেএমপির এবারের প্রতিবেদনের মূল বিষয় হাসপাতালে পানি-স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতার অবস্থা। তবে প্রতিবেদন তৈরির সময়ে বেশির ভাগ দেশ পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করেনি। প্রতিবেদনের অনেক সূচক তৈরিতে বাংলাদেশের কাছেও পর্যাপ্ত তথ্য মেলেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে ১২ শতাংশ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত সুবিধাবঞ্চিত। এর অর্থ হলো এসব হাসপাতালে ৫০০ মিটারের বেশি দূর থেকে পানি আনতে হয় বা তাদের পানি নিরাপদ নয় বা এসব কেন্দ্রে একেবারেই কোনো পানি সরবরাহ নেই। বাংলাদেশে এই হার ১৬ শতাংশ।

আবার বৈশ্বিকভাবে ১৪ শতাংশ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সীমিত আকারে পানির সুবিধা আছে। বাংলাদেশে এই সুবিধা আছে ১৩ শতাংশ কেন্দ্রে। বৈশ্বিকভাবে ৭৪ শতাংশ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যেই নিরাপদ পানির সংস্থান আছে। বাংলাদেশে এই সুবিধা ৭০ শতাংশ। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৮৭ শতাংশ হাসপাতালে এ সুবিধা আছে।

সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে সুপেয় পানির সুবিধা বেশি। ১২ শতাংশ সরকারি হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রে সুপেয় পানির সরবরাহ নেই। বেসরকারি খাতে এর পরিমাণ অর্ধেক।

পানিতে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো স্যানিটেশনে বৈশ্বিক মানদণ্ডের চেয়ে এগিয়ে। বিশ্বে ২১ শতাংশ হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা নেই। বাংলাদেশে এই হার ৭ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির যে চিত্র উঠে এসেছে, এর কারণ এখানে কমিউনিটি ক্লিনিককে যুক্ত করা হয়েছে। শুধু হাসপাতালের উপাত্ত ব্যবহার করলে বিপরীত চিত্র দেখা যেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে শৌচাগার আছে। তবে এর মধ্যে ২৮ শতাংশই ব্যবহার উপযোগী নয়। আবার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও কর্মীদের শৌচাগার পরিচ্ছন্ন থাকলেও সাধারণের ব্যবহারকারীদের শৌচাগার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্ন থাকে।

পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইডের এদেশীয় প্রধান খায়রুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্যানিটেশন সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকে এ সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে একটি নির্দেশিকা তৈরির কাজও চলছে।

পানি ও স্যানিটেশনে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বাংলাদেশে অনেক কম। এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। তবে স্যানিটেশনে উন্নতি থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার দিকে বাংলাদেশের হাসপাতাল অনেক পিছিয়ে। পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী ব্যবহার করে হাত ধোয়ার সুবিধা বাংলাদেশের ৫৪ শতাংশ হাসপাতালের আছে। এর বৈশ্বিক গড় ৫৮। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ। মালদ্বীপে এ হার ৮৮, শ্রীলঙ্কায় ৯১।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাসপাতাল আছে। ছোটগুলো বাদ দিলাম, বড় ও নামী হাসপাতালের প্রতি করিডরেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা পাওয়া দুষ্কর।’ তিনি বলেন, ‘যদি শুধু হাত ধোয়ার সুবিধাটাই পর্যাপ্ত থাকে, তবে হাসপাতালে সংক্রমণের হার ৮০ শতাংশ কমে যায়। এই বিরাট ঝুঁকি প্রশমনে বেশি অর্থ বিনিয়োগেরও দরকার নেই। অল্প সম্পদে বড় অর্জন সম্ভব। কিন্তু আমরা বিশেষজ্ঞরা হয়তো নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর অবস্থা করুণ। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে ১১ শতাংশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা আছে। ভারতের ৭৬ শতাংশ, ভুটানে ৮৬ ও শ্রীলঙ্কার ২৭ শতাংশ হাসপাতালে এ সুবিধা আছে।