জালিয়াতির মাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ, বেতন বন্ধ

যশোরের কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসায় অনিয়মের মাধ্যমে পাঁচটি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাপক অর্থ-বাণিজ্যের মাধ্যমে এই নিয়োগ দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। নিয়োগ বাতিলের দাবিতে এলাকার লোকজন বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় আদালতে মামলাও করা হয়েছে।

অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত মাদ্রাসার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে এই নিয়োগকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে এ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আবদুল কাদের। তিনি ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল গফুর ওই বছরের ১০ নভেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ছয়টি শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু তার আগেই ২২ অক্টোবর সরকার একটি পরিপত্র জারি করে যে এখন থেকে শিক্ষক পদে আর কোনো নিয়োগ পরিচালনা কমিটি দিতে পারবে না। বেসরকারি শিক্ষক প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেবে।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সরকার ২২ অক্টোবর পরিপত্র জারি করার পর ইনকিলাব পত্রিকার আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হাজির করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি। কিন্তু সেখানে তারিখ দেখানো হয় ৩ সেপ্টেম্বর। পরে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর অতি গোপনীয়তায় নিয়োগ বোর্ডবসিয়ে পাঁচজনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন ইবতেদায়ি প্রধান পদে আকলিমা খাতুন, ইবতেদায়ি সহকারী পদে ইকবাল হোসেন, কৃষিশিক্ষায় মফিজুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান/বাংলায় হাসান বায়োজিদ (তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে) ও ইংরেজি প্রভাষক পদে মহিবুর রহমান। তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি। কিন্তু তাঁরা দুই বছর পর গত২৪ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসায় আসেন। তখন এলাকাবাসী মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে এই শিক্ষকদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এরপর থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাও আর মাদ্রাসায় আসেন না।

এ বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুল জলিল সানা, সিরাজুল ইসলাম ও আবুল কাশেম মোড়ল ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ-বাণিজ্য করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দেন। তাতে বলা হয়, নিয়োগ বন্ধের সরকারি পরিপত্রের আগে ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেদিন ওই পত্রিকায় ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার নামে কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। পরে এই নিয়োগের বিষয়ে যশোরের আমলি আদালতে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি একটি মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা আলী রেজা সেতু। মামলাটি এখনো চলমান। আদালত বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ত্রিমোহিনী দারুল ইসলাম ফাজিল মাদ্রাসার যে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন পত্রিকাটির অন্য কোনো কপিতে এই বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল গফুর বলেন, ‘ইনকিলাব পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন ছাপা হয়নি।’ নিয়োগের এক বছর পর শিক্ষকদের যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলার কারণে যোগদান করাতে দেরি হয়েছে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।’ তবে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা) টাকা এখনো দেননি, তবে মাদ্রাসার তহবিলে প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে দেবেন বলে কথা হয়েছে।’

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিও একই কথা বলেন, ‘ইনকিলাব-এ কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি।’ তাহলে কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, প্রশ্নে আবদুল কাদের বলেন, ‘মনে নেই।’