বগুড়ায় বিদেশি মোড়কে নকল ওষুধ

নকল ওষুধ জব্দ ও দুজনকে জেল-জরিমানা। গতকাল বিকেলে বগুড়া শহরের খান মার্কেটের  চতুর্থ তলায়।  ছবি: প্রথম আলো
নকল ওষুধ জব্দ ও দুজনকে জেল-জরিমানা। গতকাল বিকেলে বগুড়া শহরের খান মার্কেটের চতুর্থ তলায়। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া শহরের দেশি-বিদেশি ওষুধের পাইকারি বাজার খান মার্কেট। এই বিপণিবিতানের চারতলায় একটি গুদামে মজুত করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, খাদ্যপণ্য ও প্রসাধনী। বিদেশি মোড়কে ভরা হয় নকল ওষুধ। ছোট ছোট কনটেইনারে ভরা হয় নকল শ্যাম্পু। সস্তা সাবানে দেওয়া হয় বিদেশি সাবানের মোড়ক। এসব পণ্যে বিএসটিআইয়ের নকল মনোগ্রাম লাগানো হয়। নকল ওষুধে ইচ্ছেমতো বসানো হয় ডিআর নম্বর।

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম ও সহকারী কমিশনার এ টি এম কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই গুদামে অভিযান চালান। এ সময় দুজনকে হাতেনাতে ধরা হয়। তাঁদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার শফিকুল ইসলাম ও বগুড়ার শিবগঞ্জের আবদুল মোমেন। তাঁদের মধ্যে শফিকুল রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ নামের একটি ইউনানি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর আবদুল মোমেনের দাবি, তিনি গত মাসে এই কোম্পানি থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। রেমেক্স ল্যাবরেটরিজের ব্যানারেই এসব পণ্য জালিয়াতির মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়।

জানতে চাইলে জেলা ড্রাগ সুপার আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, খান মার্কেটের ওই গুদামের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায় ছয় মাস আগে। এরপর ক্রেতা সেজে নকল ওষুধের ওই গুদামটি শনাক্ত করা হয়। এরপর গতকাল বিকেলে অভিযান চালিয়ে গুদামটি থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে মোড়ক ছাড়া কিছু প্রসাধনীও জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত দুজন বিভিন্ন ওষুধ খোলাবাজার থেকে কিনে বিদেশি (পাকিস্তান, ভারত, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র) স্টিকার লাগিয়ে ওষুধের দোকানে বিক্রি করেন। তাঁরা নিজেরাই এসব পণ্য বাজারজাত করেন। জব্দ করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, যৌন উত্তেজক ওষুধ ও সাবান, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন প্রসাধনী। এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে রেমেক্স ল্যাবরেটরিজের বগুড়ার পরিবেশক আসাদ আলী বলেন, তাঁর গুদামে দুই লাখ টাকার পণ্য রয়েছে। তিনি কোনো ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করেন না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে তিনি এসব ওষুধ কেনেন। ওই সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই তিনি বিএসটিআইয়ের মনোগ্রাম পেয়েছেন।

আসাদ আলীর বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনি দুই বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিকুল তাঁর ভাগনে। তিনি রেমেক্স ল্যাবরেটরিজে মেডিকেল প্রমোশন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দাবি করেন, তিন মাস হলো এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে এই ধরনের পণ্য বিক্রি জঘন্য অপরাধ। আগে এই মার্কেটে ভেজাল ওষুধ বিক্রি হতো। এই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর এখানে আর ভেজাল ওষুধ বিক্রি হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে প্রশাসনকে দিয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক রেজোউল আলম জুয়েল বলেন, ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদনহীন সব ধরনের আমদানি করা নামীদামি ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে না লেখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি সরকারের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। বিএমএর একাধিক সভায় এ বিষয়ে চিকিৎসকদের সতর্কও করা হয়েছে। এরপরও কোনো চিকিৎসক এসব ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সামির হোসেন বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীরা নকল বিদেশি ওষুধ বিক্রি করলেও সিভিল সার্জন কার্যালয়কে কেউ অবহিত করেননি। এমনকি কোনো অভিযোগও করেননি। যেহেতু ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নকল ওষুধ বিদেশি মোড়কে বিক্রির বিষয়টি ধরা পড়েছে, এখন এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে রোববার বগুড়ার মফিজ পাগলা মোড় এলাকার একটি ভবনের গুদামে মজুত করা বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ জব্দ করে পুলিশ।