এবার ভাঙার পক্ষে সরব এক পক্ষ

হাসপাতাল যথাস্থানে নির্মাণের দাবিতে ‘সিলেট ছাত্র ও যুবকল্যাণ ফেডারেশন’ আয়োজিত মানববন্ধন। মঙ্গলবার বিকেলে নগরের সিটি পয়েন্টে।  ছবি: প্রথম আলো
হাসপাতাল যথাস্থানে নির্মাণের দাবিতে ‘সিলেট ছাত্র ও যুবকল্যাণ ফেডারেশন’ আয়োজিত মানববন্ধন। মঙ্গলবার বিকেলে নগরের সিটি পয়েন্টে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের আদি-ঐতিহ্যের ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস’ ভেঙে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে এবার সরব হয়েছে একটি পক্ষ। ছাত্রাবাসটি রক্ষা করে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ‘শঙ্কা’ প্রকাশের পরই তারা মাঠে নেমেছে।

শতবর্ষী ভবনটি ভেঙে হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্টে ‘ছাত্র যুব ফেডারেশন’ নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ভবন রক্ষার দাবিকে ‘মহল বিশেষের অযৌক্তিক অজুহাত’ উল্লেখ করে ওই স্থানেই হাসপাতাল করার দাবি তাঁদের। একই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার ‘সিলেট কল্যাণ সংস্থা’ মানববন্ধন করবে। এরপর প্রকল্প এলাকায় এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে। শতবর্ষী ভবন রক্ষার দাবির বিপরীতে এমন তৎপরতা দেখা গেছে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সিলেট সফরের পরপরই।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, আবু সিনা ছাত্রাবাস নামে ব্যবহৃত ভবনটি ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত সিলেটের প্রথম সংবাদপত্র শ্রীহট্ট প্রকাশ-এর ছাপাখানা ছিল এই ভবন। শুধু এই তথ্যে ভবনটি শতবর্ষী। পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। শতবর্ষী ভবন রক্ষার দাবিতে সোচ্চার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, বাংলাদেশ পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী এটি ভাঙা সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ। ভবন রক্ষার দাবিতে গত ১১ মার্চ থেকে ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচির পর সিলেট-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অবহিত করেন সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

গত ২৪ মার্চ আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থানান্তর করে ঐতিহ্যবাহী ভবন রক্ষার আশ্বাস দিয়ে হাসপাতাল স্থানান্তরে নতুন করে স্থান নির্ধারণ করার কথা বলেছিলেন। এ সময় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা শতবর্ষী ভবন সুরক্ষা করে একটি বিভাগীয় জাদুঘর তাঁর নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত ৩০ মার্চ সিলেটে আসেন। তখন স্থানীয় সাংসদ হিসেবে শতবর্ষী ভবন রক্ষা ও সাবেক অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি তাঁর নজরে দেন ভবন রক্ষার দাবিতে সোচ্চার নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তখন শতবর্ষী ভবন রক্ষা করতে গেলে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এমন আশঙ্কা প্রকাশে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সরব হয় একটি পক্ষ। গত প্রায় তিন সপ্তাহ শুধু শতবর্ষী ভবন রক্ষার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালনের মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম দেখা যায় নির্ধারিত স্থানে হাসপাতাল প্রকল্পকাজ বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন।

মানববন্ধনে সিলেট ছাত্র ও যুব কল্যাণ ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এইচ এম আবদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি বিদ্যুৎ তরফদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তারা শতবর্ষী ভবন রক্ষার দাবিকে ‘মহল বিশেষের অযৌক্তিক অজুহাত’ দাবি করেন। তাঁরা এতে কর্ণপাত না করে যথাসময়ে যথাস্থানে জেলা সদর হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

একই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করবে সিলেট কল্যাণ সংস্থা। মানববন্ধন কর্মসূচির পর ৭ এপ্রিল প্রকল্প এলাকার সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। সংগঠনের সভাপতি এহসানুল হক বলেন, ‘আমরা ঐতিহ্যের বিরোধী নই। তবে এখানে হাসপাতাল না হলে প্রকল্পের টাকা ফেরত যাবে, মন্ত্রী নিজ মুখে এ কথা বলায় জনস্বার্থে আমরা হাসপাতাল স্থাপনের পক্ষ নিয়েছি।’

শতবর্ষী ভবন সুরক্ষার দাবিতে সোচ্চার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের একটি হচ্ছে এই হাসপাতাল। এ জন্য তাঁর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল স্থানান্তরের বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পাল্টাপাল্টি অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাই বিব্রতবোধ করছেন। শতবর্ষী ভবন রক্ষার দাবি ও বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবির সঙ্গে একাত্ম হওয়া ‘শত নাগরিক উদ্যোগ’ এ বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।