আত্মসমর্পণ করে পাঁচ আসামি কারাগারে

ধর্ষণের পর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সীতাকুণ্ড থানা–পুলিশের সহায়তায় এক নারীর কাছ থেকে ইয়াবা বড়ি উদ্ধার দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৬–এর বিচারক মঈন উদ্দীন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

এদিকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তে সীতাকুণ্ড থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসানের নাম উঠে আসলেও তাঁর অপরাধ আমলে নেওয়া হয়নি। আদালত পরোয়ানা জারি করলেও দুই পুলিশসহ পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।

গতকাল কারাগারে যাওয়া পাঁচ আসামি হলেন সীতাকুণ্ডের কুমিরায় আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত আলী শাহ, তাঁর সহযোগী কামাল উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, ভুক্তভোগী নারীর আত্মীয় নাছির উদ্দিন ও মো. রাকিব।

২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট নগরের হালিশহরে বাসায় ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁকে সীতাকুণ্ড নিয়ে নির্জন একটি স্থানে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে পুলিশ ওই নারীকে দুই হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের করা মাদক মামলায় কারাগারে যান তিনি। এরপর স্ত্রীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন স্বামী। আদালত ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে স্ত্রী জামিনের আবেদন করলে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিষয়টি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে দুটি সংস্থা এ বছরের শুরুতে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে কীভাবে, কেন ওই নারীকে ধর্ষণের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে, তার বর্ণনা রয়েছে।

ডিবির প্রতিবেদনে রয়েছে, সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসানের সহায়তায় এসআই সিরাজ মিয়া ও এএসআই জাকির হোসাইনের মাধ্যমে একটি সাজানো মাদক মামলায় এক নারীকে ফাঁসানো হয়েছে।। পিবিআইর প্রতিবেদনে সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

ডিবির প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে দুই পুলিশসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে গত ২০ মার্চ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অপরাধ আমলে নেওয়া আসামিরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজ মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাকির হোসাইন, ওই নারীর স্বামীর মৃত প্রথম স্ত্রীর ছেলে, তাঁর স্ত্রী, বড় মেয়ে, তাঁর স্বামী, ছেলের শ্যালক, তাঁদের চার সহযোগী ও ওই নারীর প্রথম স্বামী।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬–এর সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১২ আসামির মধে৵ সাতজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত কোলে ছোট শিশু থাকায় রোকেয়া বেগম ও শামসুন নাহারের জামিন মঞ্জুর করেন। আলী শাহসহ বাকি পাঁচজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার বাদী ওই নারীর স্বামী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আদালত পরোয়ানা জারি করলেও দুই পুলিশসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।