সিলেটি ঐতিহ্যের মিশেলে যাত্রা শুরু বাতিঘরের

‘বাতিঘর’–এ বই দেখছেন এক তরুণী। গতকাল বিকেলে সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
‘বাতিঘর’–এ বই দেখছেন এক তরুণী। গতকাল বিকেলে সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর এবার সিলেটেও যাত্রা শুরু করেছে বাতিঘর। বই বিপণনের অভিজাত এ প্রতিষ্ঠান নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকায় কার্যালয় খুলেছে। তার ভেতরে সিলেটি ঐতিহ্যের মিশেলে তৈরি করেছে বিশাল রেপ্লিকা। গতকাল শুক্রবার অনানুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর নান্দনিক এ স্থাপনা দেখতে এবং বই কিনতে বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

বাতিঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০৫ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ভবনে পুরোনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয়ে বড় পরিসরে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখা খোলা হয়। সেখানে অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী লালবাগের কেল্লা ও মোগল স্থাপত্যকে ভিত্তি করে।

চট্টগ্রাম ও ঢাকার পর বাতিঘর সিলেটেও অনুরূপ বিপণনপ্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেয়। এখানে তারা অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছে সিলেটের দুটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা—সুরমা নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ আর নদীপাড়ে স্থাপিত আলী আমজদের ঘড়ি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে চা-বাগানের সবুজ রংও দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বইপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রাম ও ঢাকার মতো সিলেটেও বাতিঘরের অভ্যন্তরীণ সজ্জা করেছেন শিল্পী শাহীনুর রহমান। আলোকসজ্জা করেছেন নাসিরুল হক খোকন ও জুনায়েদ ইউসুফ।

বাতিঘরের পরিচলনপ্রধান তারেক আবদুর রব জানান, সিলেট বাতিঘরে দেশি-বিদেশি অন্তত এক হাজার প্রকাশনা সংস্থার লাখো বইয়ের সমাহার রয়েছে। শতাধিক বিষয়ে ১০ হাজার লেখকের নানা ধরনের বই রয়েছে এখানে। ধর্ম, দর্শন, কথাসাহিত্য, অনুবাদ, কবিতা, গবেষণা, শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, জীবনী, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিল্পকলা, নাট্যতত্ত্ব, চলচ্চিত্র, ইতিহাস, রাজনীতিসহ নানা ধরনের বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর বই পাওয়া যাচ্ছে। এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। তবে গতকাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি বইয়ের বিপণন শুরু করেছে।

সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার গোল্ডেন সিটি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বইয়ের বেচাকেনা শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এটি ক্রেতাদের জন্য খোলা থাকবে। এখানে নির্বাচিত লেখক ও প্রকাশনা সংস্থার কর্নারের পাশাপাশি শিশু–কিশোর কর্নার, ছোটকাগজ ও সাহিত্য সাময়িকীর কর্নার, সিলেটি ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি কর্নার, ক্যাফে কর্নারসহ বেশ কিছু কর্নার রয়েছে।

গতকাল সকালে পাঠকদের জন্য বাতিঘরের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার পরপরই অনেকে ভিড় করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত ভ্রমণলেখক ও নাট্যকার শাকুর মজিদও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট শহরে অনেক আধুনিক বিপণিবিতান রয়েছে। কিন্তু কোথাও বড় কোনো বইয়ের দোকান নেই। অথচ সিলেটে সাহিত্যানুরাগীদের অভাব নেই। চট্টগ্রাম ও ঢাকার পর সিলেটে বাতিঘর একটি শাখা খুলেছে, এটা সাহিত্যমোদীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। এর অনুপ্রেরণায় স্থানীয়দের উদ্যোগে এ রকম আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক, সব বিপণিবিতানে একটা করে বড় বইয়ের দোকান থাকুক, আমরা এটা চাই।’

বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি মানসম্মত বইয়ের দোকান চালু করার স্বপ্ন দেখে বাতিঘর। এরই অংশ হিসেবে সিলেটে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে গ্রন্থবিপণিগুলোকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে পাঠকসমাজ গড়ে উঠবে। নতুন বইয়ের পাশাপাশি পুরোনো ও দুষ্প্রাপ্য বই বিক্রিও আমরা নিয়মিতভাবে করতে চাই। এককথায় আমরা তরুণ প্রজন্মের পাঠরুচি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে চাই।’