আবার এক পথে নৌকা চালানোর উদ্যোগ

নৌ–দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ডিঙিতে এক পথে নদী পারাপারে আবার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর অংশ হিসেবে নৌকার উপযোগী পন্টুন বসানো হবে এবং ঘাট এলাকার আশপাশের রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই যত্রতত্র নদী পারাপার বন্ধ করে ওয়াইজঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের আগানগরের নাগরমহল ঘাট পর্যন্ত ডিঙি চলাচলের উদ্যোগ নেবেন তাঁরা।
সদরঘাট থেকে কালীগঞ্জ, সিমসনঘাট থেকে কালীগঞ্জ ও ওয়াইজঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের আগানগর—বর্তমানে এই তিন পথে যাত্রীরা নৌকায় নদী পার হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গত ৭ মার্চ সদরঘাটে একটি লঞ্চের ধাক্কায় ডিঙির সাত আরোহীর মৃত্যু হয়। এরপর সদরঘাট থেকে কালীগঞ্জ এবং সিমসনঘাট থেকে কালীগঞ্জ পথে নৌকা চলাচল বন্ধ রেখে কেবল ওয়াইজঘাট থেকে আগানগর পথে নৌকা চলাচল করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। এরই অংশ হিসেবে ওয়াইজঘাট ও আগানগরে নতুন পন্টুন বসানো হয়েছিল ১১ মার্চ। তবে পন্টুন বসানোর পরদিনই কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও মাঝিরা বাকি দুটি পথ বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের মুখে এক দিনের মাথায় বন্ধ করে দেওয়া ঘাটগুলো খুলে দেওয়া হয়।

তবে যাত্রীরা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে সদরঘাটের মূল লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে একটি পথ তৈরি করার উদ্যোগটা ইতিবাচক ছিল। এতে নির্বিঘ্নে নদী পার হওয়া যেত। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে পড়ে ওই পথ বন্ধ করে দেওয়াটা দুঃখজনক।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এবার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে একটি পথে নৌকায় পারাপারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি মাসের মধ্যেই বাকি পথগুলো বন্ধ করে একটি পথ হয়ে ডিঙি চলাচল শুরু করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সদরঘাটের ওয়াইজঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের আগানগরের নাগরমহল ঘাটে ডিঙিতে যাত্রী পারাপার হবে। নাগরমহল ঘাটের খানিকটা পূর্বে আলম মার্কেটের সামনে আরেকটি ঘাট আছে। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা চাইছেন তাঁদের মার্কেটের সামনেই ঘাট থাকুক। এতে তাঁদের মালামাল আনা–নেওয়ায় বেশি সুবিধা হবে। এ কারণেই মূলত একটি পারাপার পথের বিরোধিতা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এতে নৌকার মাঝিরাও সায় দিয়েছেন।

তবে বিআইডব্লিউটিএ মনে করছে, নাগরমহল ঘাটটি আলম মার্কেট থেকে দু-তিন শ মিটার পশ্চিমে। সেখানে স্থায়ী ঘাট হলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার চারপাশে হাঁটা পথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণে দ্বিতীয় পর্যায়ের যে কাজ চলমান আছে, ওই কাজের মধ্যেই নদীর তীরে অত্যাধুনিক ঘাট নির্মাণ করা হবে। হাঁটা পথ নির্মাণ করতে হলে বাদামতলীর ট্রাকস্ট্যান্ড সরাতে হবে। তখন এই পথ হয়ে চলাচল নির্বিঘ্ন হবে। তবে আপাতত নতুন পথ হয়ে অস্থায়ীভাবে ডিঙি চলাচলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবকাঠামোগত কাজটি করছি। অবকাঠামোগত কাজ শেষ হলে ঘাট চালু করব।’ সম্প্রতি একটি ঘাট শুরুর পর বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বিষয় না। ভালো কাজ করতে গেলে দু–চারজন বিরোধিতা করবেই। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁরা মেনে নিয়েছেন।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন শেখ বলেন, যে পথে ডিঙি চলাচল করছে, ওই পথ হয়েই চলাচল অব্যাহত রাখতে হবে। এক ঘাট হয়ে চলাচলে তাঁদের আপত্তি আছে। তাঁর দাবি, আলম মার্কেটের সামনের ঘাট হয়ে চলাচলে কখনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এক ঘাট হয়ে চলাচল করলে তাঁরা ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর এম মাহবুল-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসখানেকের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে পন্টুন বসানো হবে। তবে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যখন কাজ করা হবে, তখন সবাই এই ঘাট পছন্দ করবেন। আশা করছি, তখন কেউ এই পথ হয়ে চলাচল করতে আর আপত্তি করবেন না।’