পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্রীর গায়ে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রের ভেতরে এক ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। আজ শনিবার সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই বলেন, আজ সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা ছিল। তিনি বোনকে নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান। ওই সময় কয়েকজন ছাত্র ও একজন অফিস সহকারী তাঁকে মাদ্রাসায় ঢুকতে বাধা দেন। পরে তিনি বোনকে দিয়ে চলে যান।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রীর মায়ের দায়ের করা মামলায় (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে) অধ্যক্ষ এখনো কারাগারে আছেন। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। আরেকটি অংশ অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।

বোনের বরাত দিয়ে ওই ছাত্রীর ভাই বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর বোনকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যান। তাঁরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে তাঁকে চাপ দেন। এ সময় তিনি কিছু না বলায় তিনজন শিক্ষার্থী তাঁর হাত ধরে, একজন তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। তাঁর চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।

>প্রাথমিক খবরের ভিত্তিতে প্রথম আলো অনলাইনে অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থীর নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীর মায়ের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তের পরিচয় গোপন রাখা হলো। বি.স

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রীর শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক-কর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রশ্নপত্র হলে পাঠানোর জন্য তৈরি করছিলেন। চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এক পরীক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঘটনাটি পুলিশ খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা তদন্ত করে বের করা হবে।