গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে সংঘর্ষ, আহত ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন হওয়া 'হাত' খুঁজছে পুলিশ

নাটোরের গুরুদাসপুরের হরদমা গ্রামে মোমিন আলী সরদারের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ৭ এপ্রিল, রোববার, নাটোর। ছবি: আনিসুর রহমান
নাটোরের গুরুদাসপুরের হরদমা গ্রামে মোমিন আলী সরদারের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ৭ এপ্রিল, রোববার, নাটোর। ছবি: আনিসুর রহমান

নাটোরের গুরুদাসপুরে গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে মোমিন আলী সরদার (৩৭) নামের এক ব্যক্তির ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। আলামত আড়াল করতে ওই বিচ্ছিন্ন হাত লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা হাতটি এখন খুঁজছে পুলিশ।

উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হরদমা গ্রামের নেংড়ার মোড় এলাকায় আজ রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে নতুন করে সহিংসতা এড়াতে ওই গ্রামে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত উদ্ধার কিংবা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল–অধ্যুষিত ওই গ্রামে মোমিন আলী সরদার ও মোজাম আলীর (৩৬) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তিন-চার বছর ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে হানাহানি চলে আসছে। মোমিন আলী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে প্রায় এক মাস আগে প্রতিপক্ষ মোজাম আলীর একটি পা ও দুই হাত কুপিয়ে জখম করে। মোজাম আলী বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা হলেও কেউ গ্রেপ্তার হননি।

স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আগের ঘটনার জের ধরে আজ সকালে মোজাম আলীর ভাতিজা রাসেল (২৫) তাঁর অনুগত শরীফুল ইসলাম (৩০), টগর আলী (৩৫), জমিন উদ্দিনসহ (৩২) কমপক্ষে সাত থেকে দশজন মোমিনের ওপর আক্রমণ চালান। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক কুপিয়ে তাঁর ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া মোমিন আলীর সারা শরীর কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতটিও নিয়ে যান তাঁরা।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মো. রবিউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল আটটার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় মোমিন আলীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। কনুইয়ের নিচ থেকে তাঁর ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ছাড়া বাঁ পা, মাথাসহ শরীরজুড়ে জখমের চিহ্ন ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে মোমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মোমিনের অনুগত আবু হানিফ অভিযোগ করেন, আজ সকালে খেত থেকে ভুট্টা ওঠানোর জন্য পাঁচ-সাতজন শ্রমিককে নিয়ে মোমিন খেতে যাচ্ছিলেন। পথে নেংড়ার মোড় স্থানে তাঁরা পৌঁছামাত্রই প্রতিপক্ষ রাসেল তাঁর অনুগত শরীফুল ইসলাম, টগর আলী, জমিন উদ্দিনকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মোমিনের ওপর আক্রমণ চালান। এ সময় প্রাণভয়ে মোমিনের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে যান।

আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের সড়কের ওপর রয়েছে পুলিশের গাড়ি। কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ঝামেলা এড়াতে ওই ঘটনায় মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ।

তবে প্রধান অভিযুক্ত রাসেলের মা রাজিয়া বেগমের দাবি, মোমিন আলী অন্যায়ভাবে তাঁর দেবর মোজাম আলীর হাত-পা ভেঙে দিয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে পরিবার পথে বসেছে। মামলা করেও ন্যায়বিচার পাননি তাঁরা। ক্ষোভ থেকে তাঁর ছেলেরা মোমিনের ওপর আক্রমণ করতে পারেন। তবে ঘটনাস্থলে কী ঘটেছিল, তা তাঁদের জানা নেই। সকাল থেকেই রাসেল বাড়িতে নেই বলে জানিয়েছেন রাজিয়া বেগম।

মোমিনের চাচাতো ভাই ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের দাবি, গ্রাম্য বিরোধের কারণে তাঁর ভাইয়ের ওপর এমন হামলা হবে, তা আগে বোঝা যায়নি। মোমিনকে নিয়ে রাজশাহী থাকার কারণে মামলা করতে দেরি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বেলাল।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোমিনের বিচ্ছিন্ন হাতটি উদ্ধারে চেষ্টা করছে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় মোমিনের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।