ধর্ষণ মামলার আসামি ছিনতাইকারীদের বাদ দিয়ে মামলা নিল পুলিশ

নোয়াখালীর সেনবাগে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৯) ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার শিশুটির মা বাদী হয়ে সেনবাগ থানায় মামলাটি করেন। থানা-পুলিশের লিখে দেওয়া মামলার এজাহারে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মো. রাজু ওরফে রাজনকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে রাজনকে চৌকিদারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের নাম।

ধর্ষণের শিকার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা গতকাল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরীক্ষার প্রতিবেদন দু-এক দিন পর দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। নির্যাতনের শিকার শিশুটি বর্তমানে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

মামলার বাদী শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় ও গতকাল রোববার সকালে তিনি থানায় গিয়ে কীভাবে তাঁর মেয়েকে আসামি রাজন তুলে নিয়ে গেছেন, কোথায় ধর্ষণ করেছেন, পরে আসামিকে সঙ্গে নিয়ে চৌকিদার থানায় যাওয়ার পথে কারা আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন, তার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পুলিশ মামলার এজাহার লিখেছে। তিনি তা পড়ে দেখেননি। যেখানে সই করতে বলা হয়েছে, তিনি সেখানে সই করেছেন। কিন্তু আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের নাম এজাহারে না থাকার বিষয়ে তিনি জানেন না।

যে চৌকিদার আসামি রাজনকে থানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর নাম সামছুল হক ওরফে সামু। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আসামি রাজনের দুই হাত বেঁধে অটোরিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে ছয়-সাতজন মোটরসাইকেলে করে এসে অটোরিকশার গতি রোধ করে রাজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। তিনি পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে বর্ণনা করেছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিরক্ত হন জেলার পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ। মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটা আপনি কেন বলছেন?’ বাদী শনিবার রাতে হাসপাতালে গণমাধ্যম কর্মীদের ছিনিয়ে নেওয়ার তথ্যটি দিয়েছেন এবং থানায়ও একই বর্ণনা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না।’

জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলী পাটোয়ারি। তিনি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. রাজু ওরফে রাজনকে মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে। কিন্তু যারা শনিবার বিকেলে থানায় আনার পথে চৌকিদারের কাছ থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের আসামি করা হয়নি কেন?—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ওসি স্যার জানেন। তিনি সাক্ষ্য দিতে গেছেন।’

গত শনিবার দুপুরে সেনবাগ উপজেলার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অটোরিকশায় তুলে একটি গ্যারেজে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। মেয়েটি বাড়িতে এসে মাকে ঘটনাটি জানায়। পরে কৌশলে রাজনকে আটক করে গ্রামবাসীকে খবর দেওয়া হয়। গ্রামবাসী তাঁকে চৌকিদারের মাধ্যমে থানায় পাঠালে পথে রাজনকে ছিনিয়ে নেয় তাঁর সঙ্গীরা। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে আটক করে।