নাটোরে টানা লোকসানে আবাদ কমছে

নাটোর
নাটোর

কেরামত আলী নামের অপর এক রসুন বিক্রেতা বলেন, ‘এক বস্তায় ৪১ কেজি রসুন ধরে। এখন এক বস্তা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টেকায়। অথচ মণপ্রতি খরচ হয়ছে ২ হাজার ৫০০ টেকা। এভাবে লস দিতে কষ্ট হচ্ছে।’

উপজেলার লক্ষ্মীকোল, মৌখাড়া, ভরট, বনপাড়া, জোনাইল ও গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাজার ঘুরে রসুনচাষিদের একই বক্তব্য পাওয়া যায়।

বাজিতপুর গ্রামের রসুনচাষি রুস্তুম আলী জানান, রসুন চাষ করতে অনেক বেশি শ্রমিক লাগে। জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। এ ছাড়া সার, ওষুধের দামও বাড়তি। তাতে দেখা যায়, প্রতি মণ রসুনে খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা। এবার প্রতি ৩৩ শতক জমিতে রসুন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। উৎপাদনের দিক থেকে এটা ভালো। এতে গতবারের তুলনায় লোকসান কিছুটা কম হলেও লাভ হবে না। এভাবে তিন বছর ধরে লোকসান হওয়ায় চাষিরা রসুন চাষে আগ্রহ হারিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রসুনের মোট চাহিদার ২০ থেকে ২৫ ভাগই উৎপাদিত হয় শুধু নাটোর জেলায়। ২০১৮ সালে জেলায় ২৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আগের বছর রসুনের দাম কম পাওয়ায় চাষিরা ওই বছর রসুন চাষ কমিয়ে দেন। ওই বছর জেলায় রসুন চাষ হয় ২৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন। সেবার রসুন বিক্রি হয় মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। যেসব চাষি রসুন চাষ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। পরের বছর কৃষি বিভাগ রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু এবার চাষিরা রসুন চাষ আরও কমিয়ে দেন। তাঁরা এ বছর মাত্র ১৮ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ করেন। এবার মূল্য কিছুটা বেড়ে মণপ্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও রসুনের উৎপাদন খরচের অর্ধেকটাও হচ্ছে না।

সূত্রটি আরও জানায়, রসুন চাষ করে লাভ করতে হলে প্রতি মণের দাম হতে হবে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারের অবস্থা দেখে এই দাম পাওয়া অনেকটা অসম্ভব বলে মনে করছেন চাষিরা। ফলে সামনে রসুনের চাষ আরও কমে যেতে পারে বলে এলাকায় আলোচনা হচ্ছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহম্মেদ বলেন, উৎপাদিত রসুনের অর্ধেক দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। এ রকম চলতে থাকলে রসুন চাষ এই এলাকা থেকে হারিয়ে যাবে। রসুন চাষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সংশ্লিষ্টদের বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (উপপরিচালক) রফিকুল ইসলাম বলেন, রসুন জেলার বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। বিনা চাষে রসুন উৎপাদনের ‘রোল মডেল’ এই এলাকার চাষিরা। তাই তাঁদের রসুন উৎপাদনে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে তাঁদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। দাম কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদিও দেশি রসুনের গুণগত মান ও স্বাদ অনেক বেশি। তারপরও এর দানা ছোট হওয়ায় শ্রম লাঘবে শহরের ভোক্তারা আমদানি করা বড় দানার রসুনের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দেশি রসুনের চাহিদা কমে যাচ্ছে, দামও কমে যাচ্ছে।