ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে 'মাতামাতি' পছন্দ না ২০ দলের

২০ দলের বৈঠক। ফাইল ছবি
২০ দলের বৈঠক। ফাইল ছবি

নির্বাচনের পরে একবারই বৈঠক হয় এবং ২০ দল নিয়ে কোনো কর্মসূচিও নেই। অন্যদিকে গত বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সময় সময় বৈঠক হচ্ছে। পাশাপাশি এই জোটের সঙ্গে একের পর এক কর্মসূচিও করছে। নতুন গঠিত ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপির এই ‘মাতামাতি’ পছন্দ করছেন না ২০ দলের নেতারা।

বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদে অংশ নেয় দুই জোটকে সঙ্গে নিয়েই। দীর্ঘদিনের জোট ২০ দলকে হাতে রেখে গত বছরের অক্টোবরে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচটি দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনেও এই নতুন জোটের নামেই বিএনপি ও ২০ দল অংশ নেয়। তবে ২০ দলকে ৪০টি আসন এবং ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু পুরো জোটে বিএনপি পায় ৬টি আসন এবং গণফোরাম পায় ২টি আসন। বিএনপি ছাড়া ২০ দলের অন্য কোনো শরিক দল কোনো আসন থেকে জয় পায়নি।

সম্প্রতি ২০ দলের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কোথায় বসে কত টাকা নিয়েছেন, তা–ও তাঁর জানা বলে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন অলি আহমদ। তাঁর এই বক্তব্য বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। ২০–দলীয় জোটের অনেক শরিকও ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করছেন প্রকাশ্যেই।

এর মধ্যেই আজ সোমবার সন্ধ্যায় ২০–দলীয় জোটের বৈঠক হতে যাচ্ছে। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টায় এই বৈঠক হবে। বৈঠকে বিএনপি ও ২০ দলের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

ঐক্যফ্রন্টের কারণে ২০ দল একটু ঝিমিয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, বিএনপি এখন ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বেশি ব্যস্ত। ২০ দলের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বিএনপিকেন্দ্রিক জোট। তারাই ভালো জানে, রাজনৈতিক প্রয়োজনে কখন আলোচনা করবে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরও বলেন, বিএনপি এখন ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বেশি এগোচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০ দলের কোনো তৎপরতা নেই। খেলাফত মজলিসের এই নেতা জানান, ২০ দল নামে মাত্র আছে। তাঁরা এখন নিজেদের দল নিয়ে কাজ করছেন।

গত বছরের ৩০ ডিসম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর একবারই ২০ দলকে নিয়ে বৈঠক করে বিএনপি। অন্যদিকে তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মানববন্ধন কর্মসূচি, গণশুনানিসহ একাধিক বৈঠক করে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণশুনানি হয়। এতে বিএনপি তার দুই জোটের শরিকদের প্রার্থীদের অংশ নিতে আহ্বান জানায়। ২০ দল থেকে মাত্র দুজন প্রার্থী অংশ নেন। এই জোটের প্রধান কয়েকটি দল এই গণশুনানিতে অংশ নেয়নি। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গণ–অনশনে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দলের নেতা অংশ নেন।

২০ দলের অন্যতম দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টও বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করেছে, ২০ দলও করেছে। বিএনপির ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি এবং ২০–দলীয় জোটকে এড়িয়ে চলা—মোটকথা, আমাদের কাছে ভালো লাগেনি।’ তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিনের জোট। বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০ দলের মধ্যে সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। ২০ দলের মধ্যে পর্যালোচনা করে অনিবন্ধিত ও যাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই, তাদের বাদ দিয়ে সংস্কার করা দরকার। তিনি বলেন, এখানে অনেক দল আছে, যারা নামসর্বস্ব। আবার অনেক দল আছে, যারা ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে আছে।

অন্যদিকে ২০–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি দুটি কর্মসূচিতে বলেছেন, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকেই ২০ দলের শরিকদের মধ্যে নতুন জোট নিয়ে ক্ষোভ ছিল। বিএনপি নতুন জোটকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তখন থেকেই।