জনবলসংকটে ৫২টি রেলস্টেশন বন্ধ

তীব্র জনবল–সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেলওয়ের পাকশী বিভাগ। ক্রমশ জনবল কমতে থাকায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে পাকশী বিভাগের ১২৪টি অপারেটিং স্টেশনের মধ্যে ৫২টি স্টেশন। জনবল–সংকট না কাটায় আরও স্টেশন বন্ধ হওয়ার পথে।

এভাবে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রেলস্টেশনের পয়েন্টস ও স্টেশন–সংলগ্ন লেভেল ক্রসিং গেটগুলো। এতে রেলযাত্রী ও সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

পাকশী রেল সূত্রে জানা গেছে, স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনা ও চলাচলের জন্য স্টেশনমাস্টার ও পয়েন্টসম্যান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

কিন্তু দীর্ঘদিন পদ দুটিতে জনবল নিয়োগ বন্ধ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়াতেও জনবল–সংকট তীব্র হয়েছে। পাকশী রেলবিভাগে ৩৬২ স্টেশনমাস্টারের মধ্যে ১৩৭টি পদে কোনো লোক নেই। একইভাবে ৪৬৩ পয়েন্টসম্যানের মধ্যে ১৪২টি পদ শূন্য।

এদিকে স্টেশনগুলো বন্ধ হতে থাকায় কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে যাত্রীরা। তারা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। ৬ এপ্রিল একই সময় খুলনার সিঙ্গিয়া স্টেশনে সুন্দরবন আন্তনগর এক্সপ্রেস ও নোয়াপাড়া স্টেশনে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটি এসে দাঁড়ায়। ওই সময় নোয়াপাড়া স্টেশনে সাগরদাঁড়ি ট্রেনের যাত্রা বন্ধ রেখে সুন্দরবন এক্সপ্রেস চালানো এবং নোয়াপাড়া স্টেশনে ক্রসিং দেওয়া হয়। এতে শুধু একটি স্টেশনেই সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ৩০ মিনিটের বেশি বিলম্বিত হয়। অথচ নোয়াপাড়া ও সিঙ্গিয়ার মধ্যবর্তী ফুলতুলি স্টেশন চালু থাকলে সেখানে ক্রসিং সম্পূর্ণ হতো এবং সাগরদাঁড়ি ট্রেন সময়ানুযায়ী স্টেশন অতিক্রম করত।

একই কারণে গত রোববার পাকশী বিভাগের ২৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন যাত্রাস্থল থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছাতে ১ থেকে ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব করে। খুলনা-ঢাকা আন্তনগর চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রী খোন্দকার জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, রোববার ট্রেন বিলম্ব করায় তিনি প্রায় চার ঘণ্টা দেরিতে ঢাকায় পৌঁছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মকর্তা জানান, গত এক দশকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেলওয়েতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাতে বড় বড় অবকাঠামো নির্মিত হলেও মূল সেবা প্রদানকারী পরিবহন বিভাগে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত পাকশী রেলবিভাগ।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই মুহূর্তে রেলওয়েতে ৮৬ জন স্টেশনমাস্টার নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পাকশী বিভাগেই স্টেশনমাস্টারের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৩৭টি পদ শূন্য রয়েছে।

ডিটিও আরও বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্টেশনমাস্টার নিয়োগ ও বনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ করে কাজে পাঠাতে পাঠাতে বহু সময় চলে যায়। তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য সদ্য অবসরে যাওয়া স্টেশনমাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের তালিকা রেলভবনে পাঠানো হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সম্পন্ন হলে আপাতত বিদ্যমান সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।