আগে অগ্নিনিরাপত্তা, পরে বৈধতা

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। পাশে স্থপতি জালাল আহমেদ। গতকাল আগারগাঁওয়ে আইএবি কার্যালয়ে।  প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। পাশে স্থপতি জালাল আহমেদ। গতকাল আগারগাঁওয়ে আইএবি কার্যালয়ে। প্রথম আলো

ভবনের বৈধতা-অবৈধতা দেখার আগে ভবনকে নিরাপদ করার প্রতি জোর দিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি)। এ লক্ষ্যে এখনই বাস্তবায়নযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ৯টি প্রস্তাব দিয়েছে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের এই সংগঠন। যার মধ্যে নির্মিত ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা সংযোজনের মাধ্যমে ভবনগুলোকে নিরাপদ করা, ভবনের বসবাস বা ব্যবহার সনদ (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইএবি কার্যালয়ে ‘অগ্নিনিরাপত্তা ও জীবন সুরক্ষা: নির্মিত ও নির্মিতব্য ভবনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এ সময় স্থপতিদের স্বাক্ষর জাল করে ভবনের নকশা অনুমোদনেরও অভিযোগ ওঠে।

নিরাপদ ভবনের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে তুলে ধরা স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— হালনাগাদ করা বিএনবিসির (বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড) অনুমোদন ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর উন্নয়ন কমিটি কার্যকর করা, রাজউকের তদারকি কাজ জোরদার করা, ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহৃত সামগ্রীর ‘ফায়ার রেটিং’ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে দেওয়া প্রস্তাবগুলো হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করা, অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা এবং অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি স্থপতি জালাল আহমেদ বলেন, অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ভবনমালিকদের নিজ নিজ ভবনের বিচ্যুতি চিহ্নিত করে পেশাজীবীদের মাধ্যমে ভবনের প্রয়োজনীয় নকশা করতে হবে। চার মাসের মধ্যে তা রাজউকে জমা দিতে হবে। ভবনের প্রকার অনুযায়ী পরবর্তী ৪ থেকে ৯ মাসের মধ্যে তা (সংশোধিত নকশা) বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রতি তিন মাস অন্তর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে।

এ সময় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ভবন নির্মাণ ছাড়া পৃথিবীর সব কাজ গোপনে করা যায়। এফ আর টাওয়ার ১৮ তলা থেকে ২৩ তলা হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি মাঝরাতে শুরু হয়ে সকাল হওয়ার আগেই শেষ হয়নি।’ তাঁর মতে, আইন ভঙ্গকারীদের ধরার জন্য প্রতিষ্ঠান থাকে। রাজউকের দায়িত্বের ভেতরে আছে ভবন নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখভাল করা, প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। এই স্থপতি বলেন, তিন বছর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য নির্মাণকাজ চলাকালে তা দেখভাল করতে ‘আউটসোর্সিং’ করা হবে। তাঁর মতে, এটি বাস্তবায়ন হওয়া মানেই রাজউকের একটি বিশেষ গ্রুপের সব আয় বন্ধ হওয়া, তাই এর বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থপতি ইকবাল হাবিব ভবনের বৈধতা-অবৈধতা বিবেচনার আগে ভবনটিতে অগ্নিসংকেত, নির্গমন ও নির্বাপণের ব্যবস্থা আছে কি না, তা দেখার প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, যে তৎপরতার মধ্য দিয়েই ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ব্যত্যয় করার সুযোগ দিয়েছিল রাজউক, তা শোধরানোর সময় এখন না। এখন সময় জীবন বাঁচানোর। তিনি বলেন, ‘ঢাকাতেই শুধু ভবন হচ্ছে না। এই মৃত্যুকূপ ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। আমরা যদি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভবন তৈরি করি, তাহলে সেটা বসবাসযোগ্য ঘর না হয়ে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।’

স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, ২০০৮ সালের আগে নির্মিত ভবনগুলো বেশি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ। সে ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ নিরূপণে প্রাধান্য না দিয়ে ভবনটি নিরাপদ না অনিরাপদ, তা নির্ধারণে প্রাধান্য দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি রফিক আজম, স্থপতি এহসান খান, স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বক্তৃতা করেন। সঞ্চালক ছিলেন স্থপতি মামনুন মুর্শেদ চৌধুরী।