কাগজপত্র চাওয়ায় চালকের কাণ্ড

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গতকাল সোমবার একটি ট্রাকের ধাক্কায় আহত হয়েছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজন। পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করলে পালিয়ে যাওয়ার সময় নম্বরবিহীন ট্রাকটি এ ঘটনা ঘটায়। পরে ট্রাকটি ফেলে পালিয়ে যান চালক।

আহত পুলিশের দুজন হলেন ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফেরদৌস আলম ও জগন্নাথপুর থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শাহিন আলম। অপর তিনজন হলেন উপজেলার কবিরপুর গ্রামের সুলতান মিয়া (৬০), শামীম মিয়া (২৮) ও আল আমীন (২০)। তাঁরা একটি টমটমের যাত্রী ছিলেন। আহত পাঁচজনই জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জগন্নাথপুর পৌরসভার সামনের সড়কে নম্বরবিহীন একটি ট্রাক আটকায় পুলিশ। এ সময় ট্রাকটির চালককে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলেন ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফেরদৌস আলম। এ বিষয়ে দুজনের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। একপর্যায়ে ট্রাকের চালক হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দেন। এ সময় আহত হন ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফেরদৌস আলম। এরপর বেপরোয়া গতিতে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়ক দিয়ে ট্রাক নিয়ে পালাতে থাকেন চালক। মোটরসাইকেলযোগে ওই ট্রাকের পিছু নেন জগন্নাথপুর থানার এএসআই শাহিন আলম।

 ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নম্বরবিহীন দেখেই আমরা ট্রাকটিকে থামিয়েছিলাম। চালককে বৈধ কাগজপত্র দেখতে বললে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুতগতিতে ট্রাক নিয়ে পালাতে থাকেন। মোটরসাইকেলে করে তাঁর পিছু নিতে গেলে এএসআই শাহিনও আক্রান্ত হন। তাঁর মোটরসাইকেলটিকে উপজেলা সদরের স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ধাক্কা দেয় ট্রাকটি। এতে শাহিন আহত হওয়ার পাশাপাশি তাঁর মোটরসাইকেলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এদিকে পুলিশের তাড়া খাওয়ার পর ট্রাকচালক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ট্রাকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে একটি টমটম গাড়িকে চাপা দেয়। এতে টমটমে থাকা তিন যাত্রী আহত হন। পরে চালক সড়ক পরিবর্তন করে ভবেরবাজার-সৈয়দপুর সড়কে উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সৈয়দপুর বাজার এলাকায় সড়কে ট্রাক রেখে চালক পালিয়ে যান। সেখান থেকে ট্রাকটি জব্দ করে থানায় এনে রাখা হয়েছে।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, তাঁরা ট্রাকচালকের পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছেন। ওই চালকের বাড়ি ময়মনসিংহে। ট্রাকটি ময়মনসিংহ থেকে মাছ নিয়ে জগন্নাথপুরে এসেছিল। চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। ট্রাকটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে জগন্নাথপুরে সড়কে বিশৃঙ্খলা নিয়ে আগে থেকেই মানুষের মধ্যে একধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে গতকালও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন সড়কে নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সভায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিদ্দিক আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বেগম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসির আরাফাত, জগন্নাথপুর থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী, উপজেলা প্রাণীবিষয়ক সম্পাদক কর্মকর্তা খালেদ সাইফুল্লাহ, পাটলী ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শংকর রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, অনেক দিন ধরেই অবৈধ যানবাহনের দখলে চলে গেছে জগন্নাথপুর পৌর শহরের রাস্তাঘাট। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। পাশাপাশি সড়কে যত্রতত্র গাড়ি রেখে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলায় দ্রুত নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান বক্তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সভার সভাপতি জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সভায় পুলিশকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’