'ছোটদের বড় ভালোবাসা'

>

শহীদ সামসুদ্দিন আহমদকে স্মরণ। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের হাউজিং স্টেট এলাকায় শহীদের বাড়িতে।  প্রথম আলো
শহীদ সামসুদ্দিন আহমদকে স্মরণ। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের হাউজিং স্টেট এলাকায় শহীদের বাড়িতে। প্রথম আলো

গতকাল ছিল মৃত্যুবার্ষিকী। নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় এই অনুষ্ঠান করে স্টেমাইস স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা।

শহীদ মিনারের আদলে দেয়ালপত্রিকার মতো কাগজের তৈরি স্মারক। নাম ‘স্মারকলিপি’। হাতে লেখা স্মারক-কথা। কোনোটি বাংলা, আবার কোনোটি ইংরেজি। সব লেখা একজনকে ঘিরে। বাড়ির উঠোনে এই স্মারক স্থাপন করে তাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন। ছোটদের এমন স্মরণ অনুষ্ঠানের নাম ‘বড় ভালোবাসা’।

এভাবে স্মরণ-অনুষ্ঠান দেখে তাদের সঙ্গী হন ওই বাড়ির বাসিন্দাসহ মহল্লার বিশিষ্টজনেরা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। যাঁকে স্মরণে এমন আয়োজন, তিনি শহীদ চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রাশফায়ারে তিনি নিহত হন।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল শামসুদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী। সিলেট নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার ৬৯ নম্বর বাড়িতে এই অনুষ্ঠান করে একই এলাকার ‘স্টেমাইস স্কুল’ নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খুদে শিক্ষার্থীরা। এটি ব্রিটিশ কারিকুলামভিত্তিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গতকাল সকালে স্মরণ–অনুষ্ঠান করতে প্রস্তুতি ছিল শিক্ষার্থীদের। ঝড়বৃষ্টির কারণে বেলা দুইটায় এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা গেল, শহীদ শামসুদ্দিনের বাড়ির উঠোনে বিদ্যালয়ের বেঞ্চ স্থাপন করা। সেখানে বসানো হয়েছে হাতে লেখা ‘স্মারকলিপি’টি। তাতে শহীদ শামসুদ্দিনের হাতে আঁকা একটি ছবি। পাশাপাশি যার যার হাতে লেখা ২৫টি স্মারক-কথা। এর মধ্যে পাঁচটি বাংলায়।

সরকারের স্মারক ডাকটিকিটের তথ্যভিত্তিক ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিলের ঘটনাটি অভিন্ন বর্ণনা স্থান পেলেও তাদের আবেগ-অনুভূতি ছিল ভিন্ন। ‘তিনি বড় ভালো মানুষ’ এই কথা শিক্ষার্থীদের লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে। বড় হয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদের মতো ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ পেয়েছে লেখায়। হৃদিকা আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীর লেখায় আছে, ‘...তিনি একজন ভালো ডাক্তার ছিলেন। তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি একজন বড় মনের মানুষ ছিলেন...।’

স্মারকলিপি স্থাপন করে তাতে ফুল দিয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা জানানোর পর্বটি সঞ্চালনা করেন ‘স্টেমাইস স্কুল’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মাহবুব সুন্নাহ মাহবুব সুন্নাহ। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদের চাচাতো বোন বেগম সুফিয়া খানম ও ভাগনে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব নাসরিন পারভিনসহ এলাকাবাসী।

শহীদ শামসুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। চাচাতো বোন সুফিয়া খানম শ্রদ্ধা নিবেদন করে কিছু স্মৃতিচারণাও করেন। তিনি বলেন, ‘কারফিউ উপেক্ষা করে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যাগে রেডক্রস চিহ্ন দেখিয়ে বলেছিলেন, “এই প্রতীক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মানবতার সেবার একটি প্রতীক। বাংলাদেশ আক্রান্ত, এই আক্রান্ত মানবতার সেবায় যাচ্ছি আমি।” কিন্তু প্রতীকটি আর তাঁকে রক্ষা করল না।’

মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার আহ্বান

শহীদ চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদের আত্মদানের জাতীয় স্বীকৃতি দিতে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার আহ্বান জানিয়েছে ‘নাগরিক মৈত্রী’ নামক একটি সংগঠন। গতকাল বিকেলে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ, সহকর্মী চিকিৎসক শ্যামলকান্তি লালা, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্সচালক স্মরণে একটি শোভাযাত্রা করে কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি আরশ আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ একাত্ম হন।