মোংলা বন্দরে লঞ্চ ও কার্গোডুবিতে নিখোঁজ দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

মোংলা বন্দরের পশুর নদে লঞ্চ ও কার্গোডুবির ঘটনায় নিখোঁজ দুই শ্রমিকের মরদেহ ৩৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মরদেহ দুটি উদ্ধার করেন।

উদ্ধার হওয়া মরদেহ দুটি মোংলা উপজেলার জয় বাংলা গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে মো. শাহ আলম শেখ (৫০) ও খুলনার লবণচরা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জুয়েলের (৩৫)।

গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া এলাকায় কালবৈশাখীর সময় একটি বাণিজ্যিক জাহাজের ধাক্কায় ৬০০ মেট্রিক টন সারবোঝাই কার্গো জাহাজ ‘এফ বি হারদা’ ও লঞ্চ এম এল আকতার ডুবে গিয়েছিল। এ সময় দুই নৌযানে থাকা শ্রমিক–কর্মচারীদেরর মধ্যে অন্যরা সাঁতরে তীরে ও জাহাজে উঠতে সক্ষম হলেও এই দুজন নিখোঁজ থাকেন।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মাসুদ সরদার জানান, শাহ আলমের লাশটি লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে আর কার্গোর কর্মচারী জুয়েলের মরদেহ হারবাড়িয়ার বন বিভাগের অফিস–সংলগ্ন এলাকায় ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শাহ আলমের মরদেহ ইঞ্জিন রুম থেকে বের করে। কারণ, নদীর ওই অংশটায় ডুবন্ত গাছপালার বেশ জঞ্জাল ছিল।

ঝড়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও কার্গো জাহাজ শনাক্ত করা গেলেও এ দুটিকে উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান শুরু করা হয়নি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ডুবন্ত নৌযান দুটি উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। অপর দিকে ডুবন্ত নৌযান শনাক্ত করার ফলে বন্দরের চ্যানেল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৌ চ্যানেলটি এখন ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে।

এর আগে বুধবার থেকে ডুবন্ত নৌযান শনাক্ত ও নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের মোংলা, খুলনা ও বাগেরহাটের তিনটি ইউনিটসহ কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্টিভিডরস মেসার্স খুলনা ট্রেডার্স। অভিযানের প্রথম দিনই নৌবাহিনীর সদস্যরা সাইড স্ক্যান সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডুবন্ত লঞ্চ ও কার্গোকে আনুমানিক ২০ মিটার পানির নিচে শনাক্ত করেন।

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বাহার বলেন, এ ঘটনায় মোংলা থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। মরদেহ দুটির সুরতহাল রিপোর্ট শেষে বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ডুবে যাওয়া লঞ্চ এম এল আকতার এর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খুলনা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মাসুদ কবির জানান, লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও জনবল ও উদ্ধারকারী নৌযানের অভাবে এখনো এটির উদ্ধারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে লঞ্চটির উদ্ধারকাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। ডুবে যাওয়া কার্গোর মালিকপক্ষও এটিকে উদ্ধার প্রসঙ্গে একই কথা জানিয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান জানিয়েছেন, ডুবন্ত লঞ্চ ও কার্গোর অবস্থান শনাক্তের পর বন্দরের চ্যানেল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। বন্দরের এ নৌ চ্যানেলটি এখন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। পণ্যবাহী জাহাজ আগমন ও নির্গমনে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হবে না।