ভুট্টা চাষে চাষির মুখে হাসি

শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা এখন ব্যাপক হারে ভুট্টা চাষ করছেন। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (আরএআরএস) জামালপুরের উদ্যোগে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় তাঁরা এই ভুট্টা চাষ করছেন।

চলতি রবি মৌসুমে ধানের বিকল্প ফসল হিসেবে নকলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ হচ্ছে। এই ভুট্টা চাষে চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।

নকলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। ২০১৭-১৮ রবি মৌসুমে উপজেলার ৬২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছিল। চলতি ২০১৮-১৯ রবি মৌসুমে উপজেলার চর অষ্টধর, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী, নকলা সদর ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার ৯৫০ হেক্টর (২ হাজার ৩৫০ একর) জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। ভালো ফলনের পাশাপাশি ভুট্টার ভালো দাম থাকায় চাষির মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে নকলায় ভুট্টা চাষে চাষিদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। ধান, গম, আলু প্রভৃতির তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এই উপজেলায় ভুট্টার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনকারী ফসল ভুট্টা। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশফিড হিসেবেও এর চাহিদা প্রচুর। দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। আর উৎপাদন হচ্ছে ৩৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভুট্টা; যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। বারি এরই মধ্যে প্রোটিনসমৃদ্ধ ভুট্টা উদ্ভাবন করেছে, যা মানুষ ও পশু উভয়ের জন্য খুবই উপকারী। ভুট্টাদানা থেকে স্টার্চ, চিনি, সিরাপ, তেল এবং কাণ্ড, পাতা ও ডাঁটা থেকে কাগজ, কার্ড বা হার্ডবোর্ড, প্লাস্টিক পাইপসহ বহুবিধ শিল্পজাত দ্রব্য তৈরি করা যায়। এ ছাড়া দেশের মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত চাল ও গমের ওপর চাপ কমাতেও সরকার অধিক হারে ভুট্টা চাষের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

 গত ৬ এপ্রিল সরেজমিনে চর অষ্টধর, চন্দ্রকোনা ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে রাস্তার দুই পাশে অনেক জমিতে ভুট্টার আবাদ দেখা গেছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ পতিত থাকা বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটির মাঠজুড়ে ভুট্টার খেত এখন সবার নজর কাড়ছে। এ সময় চর অষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা গ্রামের ভুট্টাচাষি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার আট একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা আবাদ খুবই লাভজনক। প্রতি একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। বিপরীতে আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।’ ভুট্টা চাষ করে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং নারায়ণখোলা বাজারে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ভুট্টা চাষে বারি, আরএআরএস ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা সব সময় তাঁকে উৎসাহ ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেন বলে তিনি জানান।

পাঠাকাটা ইউনিয়নের গোয়ালেরকান্দা গ্রামের লাল চান মিয়া বলেন, ‘ভুট্টা চাষ কইরা টিনের ঘর আর মুদি দোকান দিছি। এ ছাড়া চারটি গরু পালন করি।’

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকি গ্রামের কৃষক মোর্শেদ আলম বলেন, তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগ বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়েছে। ফলে তাঁর মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

কয়েকজন কৃষক বলেন, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভুট্টা কাটা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ভুট্টা অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় চাষিরা অলাভজনক অন্য আবাদ ছেড়ে দিন দিন ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় সর্বোচ্চ ৯৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৩০০ চাষিকে প্রতি বিঘা জমির জন্য বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।