'ভালো' নিরাপত্তার মধ্যেও মণিপুরীপাড়ায় ঘটছে চুরির ঘটনা

দুই বছর ধরে মণিপুরীপাড়ায় থাকেন ফ্রিল্যান্সার এবাদুল্লাহ মিয়া। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে বিকাশ করতে যান। এর ঠিক তিন মিনিট পর আবার এবাদুল্লাহ নিজের কক্ষে ঢোকেন। দেখেন বিছানা এলোমেলো। টেবিলের ওপরে রাখা অ্যাপল ব্রান্ডের ম্যাকবুক, এইচপি ব্রান্ডের ল্যাপটপ নেই। বাসার একটি জানালার গ্লাস ভাঙা দেখতে পান। এ ঘটনায় বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় চুরির মামলা করেন এবাদুল্লাহ।

এবাদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আগেও তাঁর বাসা থেকে ল্যাপটপ চুরি হয়েছে। আবার এ বছরও দুটি দামি ল্যাপটপ চুরি হলো। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারল না।

ঢাকার আদালত এবং পুলিশ সূত্র বলছে, গত মার্চ মাসে মণিপুরীপাড়ায় চুরির দুটি ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের তথ্য বলছে, মণিপুরীপাড়ায় গত বছর চুরির ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। আর এ বছর প্রথম তিন মাসেই এখানে চুরির ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে।

রাজধানীর এই এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক এলাকার তুলনায় ভালো বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারপরও কিছুদিন পরপর চুরির ঘটনা স্থানীয় লোকজনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, বেশির ভাগ চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা মামলা করেন না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন পিউস রোজারিও। গত ৮ মার্চ তাঁর ভাড়া বাসার গ্রিল কেটে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। পরদিন তেজগাঁও থানায় তিনি মামলা করেন। এক মাস পার হলেও চোর ধরা পড়েনি। মালামালও উদ্ধার হয়নি।

পিউস রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস পার হয়ে গেল, পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ কামরুল হাসান অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, চোর ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি মণিপুরীপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, এ এলাকায় প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। বাসার স্বর্ণালংকার, টিভি, মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। বেশির ভাগ ভুক্তভোগী থানায় মামলা করছেন না।

কাজল পালমাও কয়েক বছর ধরে থাকেন মণিপুরীপাড়ায়। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর টিভি চুরি হয়। তিনি মামলা করেননি। মণিপুরীপাড়ার আরেক ভাড়াটে উজ্জ্বল জানালেন, তাঁর বাসা থেকে মুঠোফোন চুরি হয়েছে। নিচতলার গ্রিল কেটে মোবাইল নিয়ে যায় চোরেরা। মণিপুরীপাড়ার নিরাপত্তারক্ষী রাজিবুল ইসলাম ও তোজাম্মেল স্বীকার করেন, সম্প্রতি মণিপুরীপাড়ায় কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।

মণিপুরীপাড়া নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় থাকলেও বাসাবাড়ির চুরির ঘটনায় ক্ষুব্ধ সেখানকার বাসিন্দারা। এ এলাকার নিঝুম ফ্যাশন টেইলার্সের মালিক আসিফ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, মণিপুরীপাড়ায় চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফ্রান্সিস রোজারিও নামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী আছে। তবু চুরি থামছে না। চোর ধরা পড়ছে না।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া গত ৩০ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, মণিপুরীপাড়ায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনার চোর ধরা পড়েছে। বাকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত চোরদের ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মণিপুরীপাড়া বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত ইসলাম চৌধুরী মিন্টু বলেন, সম্প্রতি দু-একটি চুরির ঘটনা তাঁদের নজরে এসেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

এই এলাকায় চুরির ঘটনার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মণিপুরীপাড়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। তারপরও সেখানে চুরির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের সব ধরনের চেষ্টাই চলছে।