বিএনপির নির্বাচিতরা জানতে চান, দল কী করছে?

বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা। তাঁরা হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা। তাঁরা হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।

বিএনপি থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দলটির মহাসচিবের কাছে জানতে চেয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী করা হচ্ছে? দল কী করছে? নির্বাচিতরা শপথ নেবেন কি না? তাঁরা দলের শীর্ষ নেতাদের বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতারা কী করছেন, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁদের অপেক্ষা করতে বলেছেন বলে এই নেতারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন প্রার্থী নির্বাচিত হন। এ প্রার্থীরা গতকাল সোমবার বিএনপির গুলশান অফিসে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে বৈঠক করেন। সেখানে শপথ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ও দলের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। তবে শপথের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির সংসদে যাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার একটি গুঞ্জন অনেক দিন থেকেই হচ্ছে। যদিও বিএনপি বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। শপথ নিয়ে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির মধ্যে হিসাব-নিকাশ চলছে। এর মধ্যেই গতকাল নির্বাচিতদের বৈঠক হয়।

তবে গতকালের আলোচনা সভাকে আনুষ্ঠানিক ‘বৈঠক’ বলতে চান না নির্বাচিতরা। ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক বৈঠক না। যাঁরা নির্বাচিত হয়েছি তাদের মধ্যে পরিচিতি ও সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। মহাসচিব বাদে বাকি পাঁচজন যাঁরা আছি তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা, কে কী অবস্থায় আছি, এলাকায় কী হচ্ছে, এগুলো নিয়েই কথা বলেছি।’

এত দিন পরে একসঙ্গে বসা প্রসঙ্গে বিএনপি থেকে নির্বাচিত এই নেতা বলেন, ‘সরকারের অবস্থান বা দলের অবস্থান কিছু বুঝতেছি না। তারপর এলাকায় জনগণের চাপ আছে। তাই ঢাকায় এক সঙ্গে হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল মহাসচিবের কাছে নিজেদের অবস্থান জানান অপর পাঁচ সাংসদ। তাঁরা আলাদাভাবে শপথ নেওয়ার পক্ষে বলে মহাসচিবকে জানিয়েছেন।

মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিবকে বলেছি দেখেন আপনারা (মহাসচিবের উদ্দেশে) কী করছেন? আমরা তো কিছু বুঝতেছি না। আমরা ব্যক্তিগতভাবে শপথের পক্ষে। যদি আমরা সংসদে গেলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়, তাহলে আপনারা একটা তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন। কীভাবে মুক্ত করা যায়, জামিন করা যায়, এগুলো দেখেন। এলাকায় প্রচণ্ড চাপ আছে। এগুলো নিয়েই কথা বলেছি। উনি আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, শপথসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলের ওপর চাপ আছে। শপথ নেওয়ার জন্য এ মাসটাই হাতে আছে। এর মধ্যেই বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে এবার নির্বাচন করে বিএনপি। সেখানে গণফোরামের দুজন শপথ নিয়েছেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিতরাও চাচ্ছেন সংসদে যেতে। তবে তাঁরা এও বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চান না। খালেদা জিয়ার জামিন হবে, সেদিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। নির্বাচিত সদস্যরা এবং বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে এবং দলকেও সে অনুযায়ীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের সঙ্গে সমঝোতা, খালেদা জিয়ার মুক্তি—এসব গুঞ্জনের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসনের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনা উঠেছে। সরকারদলীয় নেতারা বলছেন, প্যারোলের জন্য খালেদার পক্ষ থেকে আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার মিথ্যা মামলায় তাঁকে আটকে রেখেছে এবং জামিন তাঁর প্রাপ্য। বিএনপির এক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে এখন রাজনীতি, দল, সংগঠনের স্বার্থে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পয়লা বৈশাখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের তিন শীর্ষ নেতা। সেখানেও খালেদা জিয়া তেমন কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন গতকালের বৈঠক নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শপথের ব্যাপারে ম্যাডামকে মুক্তি দিলে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখব। জামিন দেওয়া সাপেক্ষেও তারা (সরকার) মামলা চালাতে পারে। এটা করলে আমরা ভেবে দেখব।’ নির্বাচিত বিএনপির নেতারা জানান, তাঁরা আবারও বসবেন। শপথ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নেওয়া হবে।