গোয়ালন্দে ধানখেতে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

গোয়ালন্দের অনেক স্থানে বোরো খেতে ধান চিটা হয়ে গেছে। সম্প্রতি দেবগ্রামে।  প্রথম আলো
গোয়ালন্দের অনেক স্থানে বোরো খেতে ধান চিটা হয়ে গেছে। সম্প্রতি দেবগ্রামে। প্রথম আলো

ধানখেতে সবেমাত্র শিষ বের হয়েছে। কিন্তু খেত সাদা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এই দৃশ্য রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাঁরা বলছেন, সব ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কালবৈশাখী দুই দফা আঘাত হানার পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো মৌসুমে গোয়ালন্দে প্রায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান। ফলন ভালো হওয়ায় এবং কিছুটা তাড়াতাড়ি ফলন পাওয়ায় এখানকার কৃষকেরা এই ধানের আবাদ বেশি করে থাকেন।

সম্প্রতি উপজেলার দেবগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পাড় ঘেঁষে ব্রি-২৮ ধানের খেত। খেতের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন কৃষক আবদুল কাদের (৬৫)। ধানখেতের পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান লাগিয়েছি। কালবৈশাখীর কারণে সব ধান চিটা হয়ে গেছে। এখন কী করমু, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। খেতজুড়ে সব ধান মরে সাদা ও হলুদ হয়ে গেছে।’

পাশের খেতে মরা ধানের শিষগুলো তুলছিলেন কৃষক রহিম কবিরাজ (৭২)। তিনি এবার নিজের এক বিঘা ও সনকরা (ইজারা) আরও দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার ধানের শিষ বের হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় সব ধান চিটা হয়ে গেছে। একদিকে নদীভাঙন, আরেক দিকে ধান সব চিটা হয়ে যাচ্ছে। আমাগো কি দেখার কেউ নেই?’

উজানচর মজলিশপুরের বাসিন্দা রাজা প্রামাণিক জানান, এবার তিনি বেশির ভাগ জমি বর্গা দিয়েছেন। কৃষকেরা জানিয়েছেন, খেতের বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। ঝড়ে ধানের শিষ ও ফুল পড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

১১ এপ্রিল গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অধিপ্তরের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ধান চিটা হওয়ার বিষয়ে জানতে এসেছেন দেবগ্রামের তেনাপচা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মজিদ মোল্লা (৭০)। তিনি বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান রোপণ করেছেন। গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিলের ঝড়ের পর খেতের বেশির ভাগ ধানগাছ হলুদ হয়ে গেছে। এখন সব ধান চিটা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে, ঝড়ের কারণে ধানের সব ফুল পড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।

ঝড়ের কারণে ধানখেতে চিটা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মোহায়মেন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধানে যখন ফুল বের হওয়ার পর পরাগায়ন চলছে, সে সময় বৈরী আবহাওয়া বা ঝোড়ো বাতাসের কারণে ধান চিটা হয়ে যায়। মূলত ব্রি-২৮ জাতের ধান বোরো মৌসুমের জন্য উপযুক্ত নয়। কিন্তু এই এলাকার অনেক কৃষক এই মৌসুমে এই ধানের আবাদ করে থাকেন। এমনকি তিন মৌসুমেই এই জাতের ধানের চাষ করেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই। মৌসুম বুঝে ধানের আবাদ করলে কৃষকের ক্ষতি কম হবে।’