'জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজ' সাবেক নাম পাচ্ছে

জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজের নাম বদলে যাচ্ছে দীর্ঘ ২৭ বছর পর। কলেজটি এর প্রতিষ্ঠাকালীন নাম পাচ্ছে। এখন কলেজটির নাম হবে মহাবিদ্যালয়।

জেলা বিএনপি মন করে এই পরিবর্তন ‘রাজনৈতিক’ বিবেচনায় করা হচ্ছে। তাদের দাবি, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতেই এই উদ্যোগ।
জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডি এলাকায় ১৯৮৫ সালে ছয় বিঘা জমি নিয়ে জয়পুরহাট মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। জয়পুরহাটে সরকারি কলেজ এবং সরকারি মহিলা কলেজ থাকায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শহরে আর একটি বেসরকারি কলেজের প্রয়োজন অনুভব করায় ওই কলেজটি স্থাপন করেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি থেকে জয়পুরহাট-১ আসনের (সদর ও পাঁচবিবি) সাংসদ নির্বাচিত হন গোলাম রব্বানী (প্রয়াত)। তিনি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হন। ১৯৯২ সালের ১৬ মে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ জিয়া কলেজ’ নামকরণের। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক কলেজের নামকরণের ফলক উন্মোচন করার। ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জমির উদ্দীন সরকার শহীদ জিয়া কলেজ নামকরণের ফলক উন্মোচন করেন। সেই থেকে কলেজটির নাম হয় শহীদ জিয়া কলেজ।

দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত মঙ্গলবার ওই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় কলেজটির শহীদ জিয়া নাম পরিবর্তন করে আগের নাম জয়পুরহাট মহাবিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং জয়পুরহাট-১ আসনের (সদর ও পাঁচবিবি) আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ সামছুল আলম। সভায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং কলেজের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাংসদ সামছুল আলম বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষদের নিয়ে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কলেজটির নামকরণ করে শহীদ জিয়া কলেজ। কলেজের সিংহভাগ (মেজরিটি) শিক্ষক, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা শহীদ জিয়া কলেজ নাম পরিবর্তন করে আগের নামকরণ করার পক্ষে মত দেন। তা ছাড়া এলাকার অনেক শিক্ষানুরাগী আগের নামকরণের পক্ষে দাবি তুলেছেন।

সাংসদ সামছুল আলম বলেন, আগের নামে নামকরণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, নাম পরিবর্তন করা হয়নি, শুধু আগের নামটি বহাল করা হবে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কাজী রাব্বীউল হাসান মোনেম বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের দাবি কলেজটির আগের নামে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। এ কারণে ১৬ এপ্রিল পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় শহীদ জিয়া কলেজ নাম পরিবর্তন করে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন নামটিই করার সিদ্ধান্ত হয়।

কলেজটির শহীদ জিয়া নামটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর কেন শহীদ জিয়া নামটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ল? এটি জনগণের কাছ থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চক্রান্ত।

নাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানানো হবে।

কলেজের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেজটির নাম পরিবর্তনে তাঁদের আগ্রহের কারণ এর উন্নয়ন। নাম ‘শহীদ জিয়া’ হওয়ায় ১৯৯৬ সালে থেকে কলেজের দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। তাঁদের ধারণা, রাজনৈতিক কারণে কলেজটি উন্নয়নের মুখ দেখেনি। ২০০৬ সালে ডিগ্রি পাঠ দানের অনুমোদন পেলেও দীর্ঘদিনে ডিগ্রির জন্য কলেজটি এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। ডিগ্রি ক্লাসের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা কোনো বেতন-ভাতাও পান না।
শহীদ জিয়া কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যসচিব সওদাগর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন বলেন, নাম বদল নয়, আগে জয়পুরহাট মহাবিদ্যালয় নাম ছিল, সেই নামকরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।