বগুড়ায় বিএনপি নেতা হত্যায় অংশ নেয় ১০ জন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জেলা মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহন ব্যবসায়ী মাহবুব আলম ওরফে শাহীনকে খুন করা হয়েছে। মাহবুব আলম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও গোপন বৈঠক হয় মোটর মালিক গ্রুপের এক নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে।

হত্যাকাণ্ডের চার দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই আসামি গ্রেপ্তার এবং খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের এসব তথ্য তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার জানান, হত্যা মিশনে অংশ নিয়েছে কমপক্ষে ১০ ভাড়াটে খুনি। খুনিরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। ঘটনার দিন মাহবুব আলম বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই তাঁর গতিবিধি অনুসরণ করছিল খুনিরা।

মাহবুব আলম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুই আসামি পায়েল শেখ (৩৮) ও রাসেল (২৮) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, পায়েল শেখ বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এবং রাসেল নিশিন্দারা মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা। গত বুধবার পায়েল শেখকে গাবতলী উপজেলা থেকে এবং রাসেলকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পায়েল শেখের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল।

পায়েল শেখ মাহবুব আলম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের জন্য আজ বিকেলে দুজনকেই বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিল্লাল হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়েছে। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিএনপির নেতা মাহবুব আলম খুনের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে বলেন, মোটর মালিক গ্রুপের একজন নেতার কার্যালয়ে হত্যার পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোটর মালিক গ্রুপের নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অপর একজন খুনিদের খবর দেন। ঘটনার দিন চারটি মোটরসাইকেলে উপশহর বাজারে খুনিরা অবস্থান করতে থাকে। খুনিদের একজন মাহবুব আলমের ধরমপুর বাসার সামনে অবস্থান নেয়। মাহবুব আলম বাসা থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে উপশহর বাজারে রওনা দিলে খুনিদের অগ্রগামী দল উপশহর বাজারে দশতলা ভবনের সামনে অবস্থান করা মূল দলের সদস্যদের সেই খবর জানিয়ে দেয়। এরপর মাহবুব আলম মোটর মালিক গ্রুপের নিজ পক্ষের দুই নেতা আলিমুদ্দীন ও বাপ্পির সঙ্গে গল্প শেষে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য একটু সরে গেলে ওত পেতে থাকা খুনিরা মাহবুব আলমের ওপর হামলা করে। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে আহত করে। এ সময় মাহবুব আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খুনিরা দশতলা ভবনের পাশের সড়ক হয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, আইনজীবী মাহবুব আলম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং খুনিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়। এরপর কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া পায়েল ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হত্যার পরিকল্পনাকারী কতজন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, আসামিদের রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন খুনের নেপথ্যে পরিকল্পনাকারী কতজন তা জানা যাবে।