তারা কখনো ওসি, কখনো ইউএনও-এডিসি!

সিম ক্লোন করে ডিজিটাল প্রতারণা করেছে প্রতারকেরা।
সিম ক্লোন করে ডিজিটাল প্রতারণা করেছে প্রতারকেরা।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী, মাদ্রাসা অধ্যক্ষসহ অনেকের কাছ থেকে কখনো পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), কখনো ইউএনও বা সরকারি কর্মকর্তা সেজে বিকাশের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ লালমনিরহাট জেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপটানা মদনেরচক গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে শিপলু ইসলাম (২৫), ইটাপোতা গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আশরাফুল আলম আশিক (২৪) ও আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ী গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে শামীম আলী (৩৮)।

এ ছাড়া চক্রের সদস্য কালীগঞ্জ থানার মহিষামুড়ি চারমাথা মুক্তিস্কুল সংলগ্ন মো. ফজলুর ছেলে আবদুল জলিল ইমন (২৮), লালমনিরহাট সদরের উত্তর সাপটানা মদনের চক গ্রামের মেছের আলীর ছেলে আরিফুজ্জামান আরিফ (২৬) ও উত্তর সাপটানা কুলাঘাট গ্রামের মোতালেবের ছেলে রবিউল ইসলাম রাসেলসহ (২৬) অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ থানায় মামলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক শিপলু একটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। পরে প্রতারণার দায়ে তার চাকরি চলে যায়।

মামলার এজাহার ও প্রতারণার শিকার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২১ মার্চ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান করছিলেন। বেলা সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির সরকারি মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন আসে। তা যে ক্লোন করা তিনি জানতেন না। নিজেকে ওসি পরিচয় দিয়ে একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে এডিসি পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁকে (আবুল কালাম) জানায়, আমরা উপজেলা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা করছি। আপনার ফিল্ড খুবই ভালো। আমাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা দেবেন। আমরা নির্বাচনের কাজ করে দেব। এ কথা বলে তিনটি নম্বরে বিকাশ করতে বলে। দ্রুত মেয়ের গয়না বন্ধক রেখে ওই নম্বরে ১৭ হাজার, ১৫ হাজার ও ১৮ হাজারসহ মোট ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পরে আরও ৫০ হাজার দাবি করলে তখন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। দ্রুত থানায় এসে বিষয়টি জানিয়ে জিডি করেন তিনি।

ওই প্রতারক চক্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল বাতেনের কাছেও ওসির ফোন নম্বর ক্লোন করে কয়েক দফায় ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ছাড়া চক্রটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নম্বর ক্লোন করে দক্ষিণ উজানচর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোজাফফর হোসেনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা, উপজেলার দেবগ্রামের খোদেজা বেগমের কাছ থেকে ২১ হাজার ৫০০, ছোট ভাকলার বিষ্ণপুরের শাহান খাতুন থেকে ১৯ হাজার ৮০০, উজানচর চর মহিদাপুরের দোকানি জাহিদুল ইসলাম থেকে ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফী জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল আহমেদ, উপপরিদর্শক (এএসআই) তমাল শেখ ১৫ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিন লালমনিরহাট সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ফিরে আসেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৭ এপ্রিল দুজন এবং ১৮ এপ্রিল আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল তাদের রাজবাড়ীর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।