মান ভালো থাকলে তা জনপ্রিয় হবেই

প্রথম আলো কার্যালয়ে পত্রিকাটির কর্মীদের সঙ্গে এক আড্ডায় অংশ নেন ‘সানন্দা’র সদ্য সাবেক সম্পাদক শর্মিলা বসুঠাকুর। তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চান প্রথম আলোর কর্মীরা। তিনিও প্রাণখুলে সব জিজ্ঞাসার জবাব দেন। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৫ এপ্রিল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম আলো কার্যালয়ে পত্রিকাটির কর্মীদের সঙ্গে এক আড্ডায় অংশ নেন ‘সানন্দা’র সদ্য সাবেক সম্পাদক শর্মিলা বসুঠাকুর। তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চান প্রথম আলোর কর্মীরা। তিনিও প্রাণখুলে সব জিজ্ঞাসার জবাব দেন। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৫ এপ্রিল। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

যেকোনো কিছুর জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে গুণগত মান। মান ভালো থাকলে তা জনপ্রিয় হবেই এবং টেকসই হওয়ার জন্যও এটি বড় কারণ। কথাগুলো বলছিলেন কলকাতাভিত্তিক জনপ্রিয় লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’র সদ্য সাবেক সম্পাদক শর্মিলা বসুঠাকুর।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে পত্রিকাটির কর্মীদের সঙ্গে এক আড্ডায় বসেন শর্মিলা বসুঠাকুর। তিনি ঢাকায় এসেছেন একটি রান্নার প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে। পাশাপাশি বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ দেখা ছিল তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া পৈতৃক ভিটা মুন্সিগঞ্জেও গিয়েছেন তিনি। আগামী শনিবার তাঁর ভারতে চলে যাওয়ার কথা।

প্রাণবন্ত এই আড্ডায় প্রথম আলোর কর্মীরা শর্মিলা বসুঠাকুরের কাছে নানা বিষয়ে জানতে চান। বেশির ভাগ জিজ্ঞাসাই ছিল মূলত তাঁর কাজ ও কাজের অভিজ্ঞতা এবং ‘সানন্দা’র এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ নিয়ে। তিনিও প্রাণখুলে সব জিজ্ঞাসার জবাব দেন। বললেন, লাইফস্টাইলের সব বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ। তিনি রাঁধতে, খেতে, খাওয়াতে, লিখতে ও বেড়াতে ভালোবাসেন। সেগুলোর জন্য যত দিন কাজ করেছেন তাঁর আলাদাভাবে কখনো মনে হয়নি যে চাকরি করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশটাও ভালো ছিল। সে জন্য তাঁর সব সময় মনে হতো, তিনি তাঁর ভালোবাসার জায়গাতেই আছেন।

খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও সাবেক ‘সানন্দা’ সম্পাদক অর্পণা সেনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও শোনান শর্মিলা বসুঠাকুর। তিনি জানান, অপর্ণা সেনের কাছে অনেক কিছু শিখেছেন। কর্মস্থলে শর্মিলা বসুঠাকুরের কাছে চা–পাতা, চানাচুর, টুকটাক খাবার থাকতো। তিনি সবাইকে সেগুলো দিতেন। এ কারণে অপর্ণা সেন মজা করে তাঁকে (শর্মিলা) ‘ভান্ডার দাত্রী’ নাম দেন।

‘সানন্দা’ ঢাকায়ও জনপ্রিয়। এ অঞ্চলের খাবার নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার প্রশ্নও শুনতে হলো তাঁকে। জবাবে তিনি বললেন, এ নিয়ে কিছু করেছেন। যদিও যতটা গভীরে বা ব্যাপ্তিতে করা দরকার, তা হয়তো হয়নি। বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শর্মিলা বসুঠাকুর বলেন, বাংলাদেশের খাবার খুবই ভালো। তাঁর ভাষায়, ‘আমার তো এটা শিকড়। বাবা, দাদা, ঠাকুরদার বাড়ি এখানে (মুন্সিগঞ্জ)। মামাবাড়ি এখানে। শ্বশুরবাড়ি সিলেট। সুতরাং এই সংস্কৃতির সঙ্গে আমি ভীষণভাবে পরিচিত।’

‘সানন্দা’র প্রচ্ছদ ও ছবি বাছাই বা ফটোশুটের প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলেন শর্মিলা বসুঠাকুর। তাঁর জবানিতে, এমন ছবি হতে হবে যেন রান্নার ছবি দেখলেই মনে হয় এখনই খাব। তবে এটাও ঠিক যে বিষয় নির্বাচন করা খুব কঠিন।

সাধারণ মানুষ লাইফস্টাইল বলতে বোঝে খাওয়া-দাওয়া, রূপসজ্জা, পোশাক ও বাড়ি সাজানো। শর্মিলার কথায়, এগুলো সত্যি। কিন্তু লাইফস্টাইল এতটা সংক্ষিপ্ত নয়। লাইফস্টাইল একটা মানুষের গোটা জীবন। আর রুচির উপস্থাপনার সঙ্গে মেধার যে কোনো বিরোধ নেই, সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে আড্ডায়।

লেখার মুনশিয়ানার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন শর্মিলা বসুঠাকুর। তিনি বলেন, ‘৫০ শব্দের রিভিউ লিখতে গেলেও যেন শ্রেষ্ঠ লেখা হয়। এই তাগিদ থেকে যেন লেখা হয়।’ একাগ্রতা ও বেশি করে পড়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ভালো লেখা, মন্দ লেখা সব পড়া উচিত।’

প্রায় আধা ঘণ্টার এই আড্ডায় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। আড্ডার শুরুতে শর্মিলা বসুঠাকুরকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রথম আলোর সহসম্পাদক তৌহিদা শিরোপা। এরপরই শর্মিলা বসুঠাকুরের কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চান প্রথম আলোর কর্মীরা। আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বিভিন্ন বিভাগের সাংবাদিকেরা।