১০ বছরে ধান-চালের রেকর্ড উৎপাদন

>

• দাম কম, অধিকাংশ চালকল বন্ধ
• হাওরের ধান কাটা চলছে
• কিছুদিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হবে
• তখন দাম আরও কমতে পারে

কৃষকের গোলা থেকে শুরু করে হাট, মাঠ, চাতাল-সবখানে ধান-চালের ছড়াছড়ি। গত ১০ বছরের মধ্যে চালের এত ভালো উৎপাদন আর হয়নি। তারপরও কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী বা চালকল মালিক-কারও মুখে হাসি নেই। কারণ, দাম প্রতি মাসে কমছে। কিছুদিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। আগের ধানই বিক্রি হচ্ছে না। নতুন ধান কৃষক কোথায় রাখবেন। এই প্রশ্ন দেশের বেশির ভাগ কৃষক ও চালকল মালিকের।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ চলতি মাসে বিশ্বের দানাদার খাদ্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ বছর উৎপাদন হতে পারে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টন চাল। ভালো আবহাওয়া ও কৃষক ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এই উৎপাদন বেড়েছে, যা বিশ্বের প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

ধানের বাম্পার ফলন হলেও দেশের প্রধান ধান-চালের মোকাম ও বাজারে বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে ধানের জোগান কম থাকে, তাই দামও বেশি থাকে। এ বছর জোগান বেশি আর দাম কম। সরকার সাড়ে ১২ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিলেও মাঠপর্যায়ে তা এখনো শুরু হয়নি। ফলে দামের ওপরে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
কৃষক থেকে শুরু করে ধানের ব্যবসায়ী এবং চালকল মালিকেরা ধান-চালের পেছনে যে বিনিয়োগ করেছেন, তা এবার উঠবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে ১২ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে ধান কিনে এখন তা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে সুদে-আসলে তাঁদের দেনা বাড়ছে।

বোরো কাটা শুরু হওয়ার এই সময়টাতে দেশের ১৬ হাজার চালকলের প্রায় সবগুলো চালু থাকে। কিন্তু বর্তমানে চালু রয়েছে প্রায় ১ হাজার চালকল। কারণ হিসেবে চালকল মালিকেরা বলছেন, তাঁদের কাছে থাকা পুরোনো চালই বিক্রি হয়নি। ফলে তাঁরা আর নতুন করে ধান কিনছেন না।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধানের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। তবে বোরো এখনো কাটা শেষ হয়নি। সব ধান কাটা হয়ে গেলে আমরা রপ্তানি না করে, অন্য কোনোভাবে ধানের দাম বাড়ানো যায় কি না, সেই উদ্যোগ নেব। বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

দেশের প্রধান ধান উৎপাদনকারী এলাকার মধ্যে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া। এসব এলাকা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ ধানের দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা কম। বর্তমানে মোটা চালের ধান প্রতি মণ ৬৪৫ থেকে ৬৬০ টাকা, মাঝারি ধান ৭০০ থেকে ৭১০ টাকা ও সরু ধান ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ হাট থেকে কৃষকেরা ধান নিয়ে ফেরত যাচ্ছেন। কারণ, বিক্রি হচ্ছে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি কেজি মোটা চাল পাইকারিতে ৩১ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এ বছর প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচই পড়েছে ৩৬ টাকা। এক মাস আগেও চালের দর ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি বোরো কাটার আগে ধানের দাম বাড়াতে চাল রপ্তানির অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধান-চালের দাম না বাড়লে কৃষক ও আমরা সবাই পথে বসব। সরকারের উচিত দ্রুত দাম যাতে বাড়ে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া।’