হোটেলে তরুণ-তরুণী খুন: তিন বছর পর অভিযোগপত্র

রাজশাহীতে আবাসিক হোটেলে তরুণ-তরুণী খুনের তিন বছর পর আজ রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। এতে হোটেলের দুই কর্মচারীসহ ছয় আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার দেড় বছর পর মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পিবিআই এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করে।

প্রথমে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। তাতে তরুণের আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল। আর আত্মহত্যার আগে তরুণ তাঁর সঙ্গের তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে পিবিআই তদন্ত করে তরুণ-তরুণী দুজনকেই হত্যার অভিযোগ এনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিল।

অভিযুক্ত ছয় আসামি হচ্ছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আহসান হাবিব ওরফে রনি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহাত মাহমুদ, রাজশাহী কলেজের ছাত্র আল আমিন ও বোরহান কবির ওরফে উৎস, হোটেল কর্মচারী নয়ন ও বখতিয়ার।

আহসান হাবিব ওরফে রনির বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার জন্তীহার গ্রামে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে অবস্থান করছিলেন। পরে পিবিআই সদস্যরা ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর তাঁকে ঢাকা থেকে আটক করেন। তাঁর মাধ্যমে তাঁরা রাজশাহী নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে ১৯ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহাত মাহমুদ, রাজশাহী কলেজের ছাত্র আল আমিন ও বোরহান কবির ওরফে উৎসকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে আহসান হাবিব ২০ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর হাকিম জাহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল রাজশাহী নগরের আবাসিক হোটেল নাইসের একটি কক্ষ থেকে মৃত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমান এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া নাসরিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মিজানুরের মরদেহ ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো ছিল। আর সুমাইয়ার মরদেহ বিছানায় পড়ে ছিল।

জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে, রাহাত মাহমুদের সঙ্গে প্রথমে সুমাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে মিজানুরের সঙ্গে নতুন করে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ নিয়ে রাহাত তাঁর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। রাহাতের সঙ্গে আহসান হাবিব ওরফে রনির পরিচয় ছিল। রাহাত নগরের বিনোদপুরের একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন। সেখান তিনি আহসান হাবিবকে ডেকে নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেন। মিজানুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা শুনে আহসান হাবিব বলেন, মিজানুরকে তিনি চেনেন। এরই মধ্যে মিজানুরের সঙ্গে দেখা করার জন্য সুমাইয়া রাজশাহীতে আসছিলেন। মিজানুর তাঁকে নাটোরের বনপাড়া থেকে এগিয়ে নিয়ে আসেন। সে সময় মিজানুর আহসান হাবিবকে ফোন করে জানতে চান শহরের কোন হোটেলে উঠলে ভালো হয়। আহসান হাবিব তাঁকে হোটেল নাইসে ওঠার পরামর্শ দেন। এই ফোনকল থেকেই পরে পিবিআই আসামি আহসান হাবিবকে শনাক্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল রাত ৮ থেকে ১০টার মধ্যে হোটেল কক্ষে মিজানুর ও সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন ২২ এপ্রিল সুমাইয়ার বাবা আবদুল করিম বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম বাদশা। পাশাপাশি মামলাটির ছায়া তদন্ত করেছিল পিবিআই। তদন্ত শেষে পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম আজ ছয় আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।