একটি বিভাগ-সেরা বিদ্যালয়ের গল্প

বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক।  প্রথম আলো
বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক। প্রথম আলো

সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা থাকলে যে ধারাবাহিক সাফল্য পাওয়া যায়, তা প্রমাণ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে রংপুর বিভাগে সেরা। ১০ বছর ধরে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টির এই ঈর্ষণীয় অর্জন।

চমৎকার ফলাফল করা বিদ্যালয়টি রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর এলাকায়। এর নাম বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুধু নামে নয়, বাস্তবেও সব দিক থেকে মডেল এই বিদ্যালয়। ২০১৮ সালে রংপুর বিভাগের ৯ হাজার ৫১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিদ্যালয় সেরা নির্বাচিত হয়েছে।

ফলাফলে চমক

২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ১৭১ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছে ৪৭৬ জন। ২০০৯ সাল থেকে সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার শতভাগ। ২০১৭ সালে বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পায় ৫১ জন। এর মধ্যে মেধাবৃত্তি লাভ করে ৪৩ জন। সাধারণ বৃত্তি পায় ৮ জন। আর জিপিএ–৫ পায় ৯৭ জন। ২০১৮ সালে ১৫৫ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পায় ৯০ জন। বৃত্তি পায় ১৭ জন।

২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়টি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলায় প্রথম স্থান দখলে রেখেছে। ২০১৭ সালে পিইসি পরীক্ষার ফলাফলসহ ১৯টি বিভাগে বিদ্যালয়টি রংপুর বিভাগের মধ্যে সেরা হয়।

সাফল্যের নেপথ্যে

ধারাবাহিক এই সাফল্য কীভাবে পাচ্ছেন, এই প্রশ্নের জবাবে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নার্গিস খানম বলেন, ‘বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সাফল্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্বপ্রস্তুতি, পাঠদানের সময় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার, হাস্যরস ও খেলার ছলে পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন, দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে আরও আন্তরিকভাবে পাঠদান, ছুটির আগে–পরে অতিরিক্ত পাঠদান, প্রতিটি অধ্যায় শেষে এবং সাপ্তাহিক-মাসিক পরীক্ষা, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরের ৩০ জুনের মধ্যে পাঠদান শেষ, প্রতি মাসে মা ও বছরে দুবার অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন। পাশাপাশি আমরা শিক্ষকেরা স্কুল ছুটির আগে–পরে এবং স্কুল বন্ধের দিনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ করি। এ ছাড়া সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি, জারিগানসহ প্রভৃতি বিষয়ে সপ্তাহে এক দিন শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করানো হয়। এর আগে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণ করে আমাদের বিদ্যালয়টি অন্তত দশবার সেরা হয়েছে।’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাসির মুগ্ধ বলে, ‘ক্লাসে স্যারেরা যেভাবে পড়ায়, যত খোঁজ নেয়, সেটা বাবা-মাও নেয় না। স্যারেরা আমাদের বাড়িতেও যায়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম শাহ্ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৯ বছর ধরে সেরা ফলাফল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বদরগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের ২৭৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পিইসি পরীক্ষার ফলাফলে ১০ বছর ধরে বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেরা হয়ে আসছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম শাহ্ বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিকল্পনা, একাগ্রতা, সদিচ্ছা, তদারকি ও পেশাদারত্ব থাকলেই যেকোনো কাজে সফলতা অর্জন করা যায়। সেরা হওয়ার পেছনে শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের অবদান রয়েছে।’

এই বিষয়ে রংপুর জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াছমিন আক্তার বলেন, আন্তরিকভাবে পাঠদান করালে শহরের স্কুলগুলোকেও যে টপকে যাওয়া যায়, তা বিভাগের মধ্যে সেরা হয়ে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।