কম্বাইন্ড হারভেস্টরে সংকট দূর

কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্র দিয়ে খেতের ধান কাটা হচ্ছে। গত শনিবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দুলোয়ার হাওরে।  ছবি: প্রথম আলো
কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্র দিয়ে খেতের ধান কাটা হচ্ছে। গত শনিবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দুলোয়ার হাওরে। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবছর ৪৮ কেদার (১ কেদারে ৩০ শতাংশ) জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষক সোনা মিয়া। ধান কাটার মৌসুমে রংপুর অঞ্চল থেকে ৪০ জন শ্রমিক আসেন তাঁর বাড়িতে। এবার একজন শ্রমিকও আসেননি। খেতের পাকা ধান কীভাবে ঘরে তুলবেন, সেই চিন্তায় দিশেহারা ছিলেন সোনা মিয়া। এ অবস্থায় তিনি জানতে পারেন কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্রের কথা।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া গ্রামের বাসিন্দা সোনা মিয়া বলেন, ‘এবার হাওরজুড়ে চরম শ্রমিকসংকট চলছে। ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে সত্যিকার অর্থেই চিন্তায় ছিলাম। এ অবস্থায় একজনের মাধ্যমে কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্রের কথা জানতে পারি। এরপর কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারাই কম্বাইন্ড হারভেস্টর ভাড়া করতে সহযোগিতা করে। যন্ত্রটি পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কম খরচে ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে পেরেছি।’

সোনা মিয়ার মতো হাওরের সব কৃষকই এবার শ্রমিকসংকটে পড়ে পাকা ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েন। কিন্তু কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্র দিয়ে এখন জোরেশোরে চলছে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। ফলে পাকা ধান ঘরে তোলার দুশ্চিন্তা অনেকটা ঘুচে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হাওরাঞ্চলের প্রধান ফসল বোরো ধান। প্রতিবছর হাওরবাসী বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তবে কৃষকের সামনে বড় উদ্বেগ হয়ে দাঁড়ায় সময়মতো ফসল ঘরে তোলার বিষয়টি। বছরের এই সময়টায় হাওরাঞ্চলে একযোগে বোরো ফসল কাটা-মাড়াই শুরু হয়। ফলে এলাকার শ্রমিকদের দিয়ে কুলোয় না। রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিক এলে সেই ঘাটতি পোষানো যায়। কিন্তু দিনে দিনে অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক আসা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি বিভাগ এ বছর এলাকায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তবে এই যন্ত্র কেনার সামর্থ্য সব কৃষকের নেই। তাই কৃষি বিভাগ ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে অনেক কৃষককে যন্ত্রটি কিনতে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে উপজেলার ১৯ জনকে ১৯টি যন্ত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রের মোট দামের ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।

কৃষি বিভাগ বলছে, প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে খরচ কম ও সময় সাশ্রয় হয়। এ ছাড়া মাঠে ধান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপচয়ের আশঙ্কা থাকে না। একটি যন্ত্র দিয়ে এক দিনে ১০ কেদার জমির ধান, কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দী করা যায়। খরচ হয় সর্বসাকল্যে দেড় হাজার টাকা। সেখানে এক কেদার জমির ধান কাটা ও মাড়াই দিয়ে বস্তাবন্দী করতে ১০ জন শ্রমিকের পুরোটা দিন লেগে যায়। বর্তমানে কৃষিশ্রমিকের দৈনন্দিন মজুরি ৬০০-৭০০ টাকা। সে হিসাবে এক কেদার জমিতে সাত হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, বর্তমানে উপজেলায় ১৯টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর যন্ত্র রয়েছে। এসব যন্ত্রের সদ্ব্যবহার করতে মালিকদের নিয়ে সভা করেছে কৃষি বিভাগ। এর মাধ্যমে যেসব কৃষকের ধান কাটা শেষ হয়েছে, সেসব কৃষকের যন্ত্র অন্য কৃষকের ধান কাটার কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে কোনো কৃষক পাকা ধান ঘরে তুলতে সমস্যা পড়বেন না বলে মনে করছেন তিনি।