জামিন জালিয়াতি করে আইনজীবী গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের আইনজীবী। এবার তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন মাদক মামলার জামিন জালিয়াতির অভিযোগে। এই আইনজীবীর নাম সালাহউদ্দিন বিশ্বাস। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মহিশালবাড়ি মহল্লায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার শাহবাগ থানা–পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম ওই আইনজীবীর গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অমল কৃষ্ণ দে। তিনি জানান, মামলাটির বাদী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরের সুপারিনটেনডেন্ট মজিবর রহমান। গত মার্চে মামলাটি করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর গোদাগাড়ী উপজেলার আঁচুয়াভাটা গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে বাবু ৫৫০ গ্রাম হেরোইনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এরপর রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাঁর কয়েক দফা জামিনের আবেদন করা হলেও নাকচ হয়। এই অবস্থায় হাইকোর্টে তাঁর জামিন চাওয়া হয়। জামিন পেতে আশরাফুলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া হেরোইনের পরিমাণ ৫৫০ গ্রামের পরিবর্তে ৪৮ গ্রাম দেখানো হয়।

রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বলেন, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আসামি আশরাফুলের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। পরবর্তী সময়ে আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস রাজশাহীর বিচারিক আদালতে আশরাফুলের মুক্তির জন্য ‘বেলবন্ড’ দাখিল করেন। তখনই জামিন জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর আসামির জামিন বাতিল হয়। পরে আশরাফুল আর জামিন পাননি। সম্প্রতি তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জামিন জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়ে গত বছরের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের জামিন আদেশটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠায়। ২৭ মার্চ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জামিন আদেশ ও মামলার নথিপত্র আদালতে দাখিল করে। সেদিন সংশ্লিষ্ট আদালতের আইন কর্মকর্তা আসামির জামিন বাতিল ও জামিন জালিয়াতির ঘটনায় অন্য কারা জড়িত, তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) মাধ্যমে তদন্ত করার আবেদন করেন।

এই জামিন জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করতে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। সিআইডি দীর্ঘ সময় ধরে বিষয়টির তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনসহ গত ৯ মার্চ শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিদের নাম না জানালেও পুলিশ জানিয়েছে, রাজশাহীর আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাসসহ আরও আসামি আছেন। সালাহউদ্দিন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর র‌্যাব ৫ কেজি হেরোইন জব্দ করে। এই ঘটনায় মামলার আলামত পরিবর্তন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। উড়ো ফোন পাওয়ার পর রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ জেলা বিশেষ শাখার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। এই কমিটি গত বছরের ২৯ মে পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, হেরোইনের আলামতের প্রতিবেদন পাল্টে ফেলা হয়েছে। এরপর নতুন করে মামলাটির তদন্ত শুরু হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ছয়জন আইনজীবীকে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া সালাহউদ্দিন বিশ্বাসের নাম রয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সালাহউদ্দিন বিশ্বাস একজন মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসায়ীদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। পুলিশি তদন্তে আইনজীবী হিসেবে তাঁর নাম এক নম্বরে রয়েছে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অমল কৃষ্ণ দে বলেন, আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।