ক্ষতির আশঙ্কায় হাওরে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ

বৃষ্টি হচ্ছে, আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হাওর এলাকায় পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে—এই আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই তাড়াহুড়া করে হাওরের বোরো ধান তোলায় ব্যস্ত কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার, ২ মে, সুনামগঞ্জ। ছবি: খলিল রহমান
বৃষ্টি হচ্ছে, আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হাওর এলাকায় পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে—এই আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই তাড়াহুড়া করে হাওরের বোরো ধান তোলায় ব্যস্ত কৃষকেরা। বৃহস্পতিবার, ২ মে, সুনামগঞ্জ। ছবি: খলিল রহমান

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে হাওর এলাকায় পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে—এই আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জেলার হাওরে পাকা ধান দ্রুত কাটতে কৃষকদের নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে আজ বৃহস্পতিবার এক বার্তায় বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলায় ও ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে জেলার নদ-নদী, হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই কৃষকদের জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের জমিতে থাকা পাকা ধান কাটার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে ঢল নামার কারণে জেলার প্রধান নদী সুরমায় পানি বাড়ছে। গত দুই দিনে সুরমা নদীর পানি তিন মিটার বেড়েছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে হাওর এলাকায়ও পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় পানির বিপৎসীমা সাড়ে ছয় মিটার। এখন পানি আছে পাঁচ মিটারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে এবং উজানে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় হাওর এলাকার নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোনো হাওরে পানি ঢোকেনি। আমরা কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কাটতে বলছি। একাধারে আরও দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি হলে হাওরে পানি ঢুকতে পারে। তাই এই নির্দেশনা।’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান (৭০) এবার গ্রামের পাশের দেখার হাওরে চার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি তিন একর জমির ধান কেটেছেন। বাকি আছে আরও এক একর। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জমি থেকে কাটা ধান এবং জমিতে থাকা পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। আতাউর রহমান প্রথম আলোকে জানান, কাটা ধান মাড়াই করে বৃষ্টির জন্য শুকানো যাচ্ছে না। আবার এখন জমিতে থাকা ধানও দ্রুত কাটতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে একই গ্রামের কৃষক আবদুল আউয়াল (৫৫) পরিবারের সবাইকে নিয়ে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন হাওরের খলায়। আবদুল আউয়াল বলেন, হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর সপ্তাহখানেক সময় পেলে ধান কাটা ও মাড়াই পুরোপুরি শেষ হয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে দিনে ও রাতে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। আউয়ালের পাশে থাকা কৃষক সিরাজ উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘বললেই তো আর ধান কাটা যাবে না। এত লোক (শ্রমিক) কই। লোক তো নাই। ধান কাটার পর মাড়াই ও শুকাতে হবে। বৃষ্টির জন্য এসব করা যাচ্ছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় এ পর্যন্ত হাওরে ৮৪ ভাগ এবং হাওরের বাইরে ৩৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় গড়ে ধান কাটা হয়েছে ৭৪ ভাগ। বাকি ধান এখন জমিতে পাকা অবস্থায় আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে হাওরের বাইরে তুলনামূলক উঁচু জমিতে এখনো কিছু ধান আছে। এই ধান সব সময়ই কৃষকেরা দেরিতে কাটেন। যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আবার ঘূর্ণিঝড় আসছে, তাই কৃষকেরা যাতে দ্রুত জমির সব পাকা ধান কেটে শেষ করেন, এ জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’