বাসচালকের খুনি তবে কারা?

>
জালাল উদ্দীন
জালাল উদ্দীন

• ইয়াবা আছে দাবি করে চালককে পেটানো হয়
• হাসপাতালে চালককে মৃত ঘোষণা করা হয়
• পুলিশ বলছে, জড়িতরা ডিবির কেউ নয়
• র‍্যাব বলেছে, তারা অভিযান চালায়নি


চট্টগ্রামে বাসচালক জালাল উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা মামলার তদন্তে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জড়িত নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। র‍্যাব বলেছে, তারাও অভিযান চালায়নি। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির পরিবার ও বাসচালকেরা বলেছেন, জড়িত ব্যক্তিরা যে-ই হোক, শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে কঠোর কর্মসূচি দেবেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. মুছা প্রথম আলোকে বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পুলিশ কমিশনারের আশ্বাসে ৫ মে তাঁরা ১১ জেলায় ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন।

মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জুয়েল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়ের তিন ছেলের মধে৵ বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। ছোট আরও দুই ছেলে। তাদের কী অপরাধ। বাবাকে হারিয়েছে তারা। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের যেন বিচার হয়, এটাই আমাদের চাওয়া।’

গত ২২ এপ্রিল রাতে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাসংলগ্ন শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জালাল উদ্দিনের কাছে ইয়াবা আছে দাবি করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের করা লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহত ব্যক্তির শরীরের পিঠ, কোমর, হাঁটু ও হাতের কবজিতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই জুয়েল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নগরের কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গাড়িতে ওঠা লোকজনের হাতে অস্ত্র, হাতকড়া ও ওয়্যারলেস সেট ছিল। হত্যার প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ ৮৮টি রুটে বাস ধর্মঘট পালন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রাম। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাসটির সুপারভাইজার আজিম উদ্দিন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক ব্যক্তি ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।

আজিম জবানবন্দিতে বলেন, কক্সবাজার থেকে ২৮ জন যাত্রী নিয়ে গত ২২ এপ্রিল রাত আটটার দিকে গাজীপুরের উদ্দেশে তাঁরা রওনা হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাড়িটি শিকলবাহা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে চারজন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গাড়িটি থামান। তাঁদের হাতে অস্ত্র, হাতকড়া, ওয়্যারলেস ও টর্চলাইট ছিল। চালক জালালকে তাঁরা বলেন, তাঁর কাছে ইয়াবা আছে। ওই সময় চালককে হাতকড়া পরিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এ সময় চালককে মারধর করতে থাকেন। যাঁরা চালককে মেরেছিলেন, তাঁদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে হবে। ঘটনার সময় কেউ কারও নাম উচ্চারণ করেননি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পেশায় দারোয়ান স্থানীয় ওই ব্যক্তি জবানবন্দিতে বলেন, বাসটি থামার কিছুক্ষণ পর একটি মাইক্রোবাস আসে। নম্বরটি মনে নেই। গাড়ি থেকে চার থেকে পাঁচজন লোক নামেন। আরেকটি আসে জিপগাড়ি। আরেকটি প্রাইভেট কার। মোট গাড়ি তিনটি। সব কটি গাড়ি একসঙ্গে ছিল। তাঁদের কাউকে তিনি চেনেন না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের পরিদর্শক আফতাব হোসেন তাঁর কার্যালয়ে বলেন, দুজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান তাঁর কার্যালয়ে বলেন, নিশ্চিত হওয়া গেছে, ডিবি পুলিশের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তাহলে কারা জড়িত—প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

পুলিশের ভাষ্যমতে, ডিবির কেউ জড়িত নয়, জড়িতরা তবে কারা—জানতে চাইলে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়েত জামিল ফাহিম বলেন, ঘটনার দিন ওই জায়গায় র‍্যাব কোনো অভিযান চালায়নি।