দিনাজপুরে ইটভাটার ধোঁয়ায় বোরো ধানের ক্ষতি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কুমড়িয়া গ্রামে ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হওয়া ধান।  প্রথম আলো
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কুমড়িয়া গ্রামে ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হওয়া ধান। প্রথম আলো

‘সমিতিত লোন করিয়া মাইনসের এক বিঘা জমি চুক্তি নিছি। ওষুধ আর সার অইলাও বাকি নিছি। ধান হইবে বেচায়া টাকা শোধ করোমো ছয় মাসের খাবারের চিন্তা রহিবে না। সেই ধান হামার ভাটার ধোঁয়ায় পুড়ি গেল। হামরা এলা খামো কী, কিস্তি শোধ করমো কী দিয়া?’ নিজ হাতে লাগানো বোরো খেতের আলে বসে আক্ষেপ করে কথাগুলো দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কুমড়িয়া গ্রামের মমতা বেগম (২৮)।

শুধু মমতা বেগমই নন, দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা জমির বোরো ধান ইট ভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল খানসামা উপজেলার কুমড়িয়া ও চণ্ডীপাড়া, চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর এবং বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া, বানপাড়া এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, সবুজ খেতের ধানগাছ ধোঁয়ার কারণে লালচে হয়ে গেছে। পাতা কুঁকড়ে গেছে। ধানের শিষ পরিণত হয়েছে চিটায়। শুধু ধান নয়, নষ্ট হয়েছে আম ও লিচু। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ধোঁয়া বন্ধ হলেও বিষাক্ত রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় এখনো ফসলের খেতসহ গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, গত ২৮ এপ্রিল খানসামা উপজেলার মন্ডলের বাজার এলাকায় মেসার্স এসএইচএস এবং মেসার্স টু-স্টার ইটভাটা ও ২৯ এপ্রিল বীরগঞ্জ উপজেলার মেসার্স এসবিএম ইটভাটা চলতি বছরের জন্য তাদের ভাটায় ইট পোড়ানো কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ভাটা বন্ধ করার পর হঠাৎ ভাটার চিমনি দিয়ে বিষাক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হতে থাকে। রাতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন বোঝা না গেলেও পরের দিন কৃষকেরা দেখতে পান তাঁদের খেতের ফসল কালো হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। গাছপালার পাতা কুঁকড়ে গেছে।

খানসামা উপজেলার কুমড়িয়া গ্রামের মো. সবুজ বলেন, ‘বিঘায় ৪০ মণের উপরে ধান পাই। এবার ৪ বিঘায় ধান লাগাইছি। আর মাত্র ২০-২২ দিন বাদেই ধান কাটা শুরু করব। সামনে রোজার মাস। এই সময় এমন ঘটনা ঘটল। আমরা চাই ভাটার মালিক আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক। আমরা এলাকায় ভাটা দেখতে চাই না।’

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. সফিকুল বারী বলেন, সাধারণত কয়েকটি চুল্লিতে আগুন রেখেই ভাটা বন্ধ করার নিয়ম। যদি একবারেই ভাটার সব চুল্লিতে আগুন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে চিমনি দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ভারী সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। সেই ভারী সালফার গ্যাস খুব বেশি ওপরে যেতে না পেরে দ্রুত নিচের দিকে আসতে থাকে এবং কাণ্ড ও পাতায় ঢুকে ফসল ও গাছ নষ্ট করে দেয়।

এই বিষয়ে খানসামা উপজেলার এসএইচএস ভাটার মালিক মো. মান্নান সরকার ও মোজাফফর সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা সম্ভব না হলেও বীরগঞ্জের এসবিএম ভাটার মালিক মো. সেলিম এবং খানসামার মেসার্স টু-স্টার ভাটার মালিক মো. সাইফুর রহমান সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের ভাটায় বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গমনের ব্যবস্থা আছে। তারপরও যেহেতু কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, আমরা চেষ্টা করব ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আমরা মেনে নেব।’