'দুই ছেলের নির্যাতন থেকে আমাকে বাঁচান'

সন্তানের কোপানো মাটির ঘরে অসহায়ভাবে বসে আছেন বৃদ্ধা মা। চোখে–মুখে আতঙ্কের ছাপ। পানি, বিদ্যুৎ ও শৌচাগার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় তাঁকে। এমন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য আকুতি জানিয়েছেন দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের জাহানারা বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধা। দুই সন্তানের বিরুদ্ধে দীঘিনালা সেনা জোনে গতকাল সোমবার সকালে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করেন দুই সন্তান। গত রোববার দীঘিনালার কবাখালী ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া গ্রামে তাঁর বসতবাড়ি কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন ছেলেরা। লিখিত অভিযোগে মা তাঁর দুই সন্তানের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ করেছেন। বৃদ্ধার সন্তানেরা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন।

জাহানারা বেগম দীঘিনালা সেনা জোনে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাঁর নামে ৫৩ নম্বর কবাখালী মৌজায় জমি রয়েছে। আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রত্যেক সন্তানকে জায়গা-জমি দান করেছেন। তাঁর বড় ছেলে মো. মান্নান ও মেজ ছেলে মো. হান্নান তাঁর নামের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার জন্য তাঁকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন ও পরিকল্পিতভাবে দা-ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন। দুই ছেলের অত্যাচারে মেয়েদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি।

ঘরের চারপাশ ঘুরিয়ে কোপানোর চিহ্ন দেখিয়ে জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার বড় ছেলে হাফেজ মো. মান্নান (৪০) ও মেজ ছেলে হাফেজ মো. হান্নান (৩৫)। বড় সন্তান মান্নান মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেসের (এমইএস) বেসামরিক কর্মচারী। সম্পত্তির জন্য তারা দুজন আমাকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করে। আমার আট সন্তান, তার মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ও তিনজন ছেলে। আমার স্বামী আবদুল খালেকও এমইএসে চাকরি করতেন। তিনি ১৪ বছর আগে মারা যান। পাঁচ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা সবাই আলাদা হয়ে গেছে। আমি একা থাকি।’

জাহানারা বেগম বলেন, রোববার সকালে মেজ ছেলে হান্নান হঠাৎ শাবল নিয়ে এসে তাঁর ঘর কোপাতে থাকেন। তিনি ভয়ে ও আতঙ্কে কোনো প্রতিবাদ করেননি। তাঁকে বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগার ব্যবহার করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে বড় ছেলে মান্নান তাঁকে নির্যাতন করেছেন। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেয়েদের কিছু সম্পত্তি দেন তিনি। তারপর থেকে ছেলেরা তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু করেছেন। তাঁকে কেউ ভরণপোষণ দেন না। সব সময় নির্যাতনের আতঙ্কে থাকা জাহানারা বেগম নিজের এই অসহায়ত্ব আর মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান।

প্রতিবেশী শাহারা খাতুন বলেন, ‘প্রায় সময় সন্তানেরা জাহানারা বেগমকে নির্যাতন করে। গত রবিবার সকালে বসতঘর কুপিয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি (জাহানারা বেগম) আমাদের বাড়িতে গিয়ে গোসল করে এসেছেন।’

বড় ছেলে মো. মান্নান বলেন, ‘মা মিথ্যা কথা বলছে, আমি নির্যাতন করি না। মা আমার উপকার করে না, তাই আমিও করি না।’ মেজ ছেলে মো. হান্নান বলেন, ‘নতুন ঘর তুলব, তাই ঘর কুপিয়েছি। মায়ের সম্পত্তি তার মেয়েদের দিচ্ছে। মা ভালো ব্যবহার করে না, তাই আমরাও মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি না।’

৩ নম্বর কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সম্পত্তির জন্য জাহানারা বেগমের সঙ্গে সন্তানেরা অমানবিক আচরণ করছেন। রোববার সকালে বৃদ্ধার ঘর কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। সন্তানদের শাস্তি পাওয়া উচিত।