ধানের দাম কম, তাই কাটার শ্রমিক নেই

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাকা ধান। শ্রমিকের অভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কদম শহরে।  ছবি: প্রথম আলো
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাকা ধান। শ্রমিকের অভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কদম শহরে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কদম শহর গ্রাম। জমির ধান পেকেছে। কাটার শ্রমিক নেই। ৫৫ বছর বয়সী মকবুল হোসেন তাই নিজের জমির ধান নিজেই কাটছেন। বললেন, এবার ধানের দাম কম, তাই ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না। সাধারণত ধানের বিনিময়ে শ্রমিকেরা গৃহস্থের ধান কেটে ঘরে তুলে দেন। দাম কম হওয়ার কারণে শ্রমিকেরা অন্য কাজ করছেন। শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়েই পাকা ধান নিয়ে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু না হলে কৃষকদের ধান নিয়ে আরও ভুগতে হবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

এই এলাকায় নতুন ব্রি-২৮ ধান ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর জিরা ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। শ্রমিকেরা আগে এক মণ ধান কেটে পাঁচ কেজি ধান তাঁদের পারিশ্রমিক হিসেবে নিতেন। এখন তাঁরা ১০ কেজির কমে মাঠে নামতে চাচ্ছেন না। কোনো কোনো এলাকার শ্রমিক ধানের বিনিময়ে আর ধান কাটতেই চাচ্ছেন না। তাঁরা নগদ টাকা চাচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক হাঁকছেন। কৃষকেরা মনে করছেন, এত টাকা দিয়ে ধান কাটা সম্ভব নয়। তাই ধানের পেছনে সব খরচ করে এখন পাকা ধান নিয়ে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে এই অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ধানের খেতের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমে আছে। যে জমিতে পানি রয়েছে, সেই জমিতে ধানের বিনিময়ে ধান কাটার কোনো শ্রমিকই মিলছে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় প্রায় ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন ধান হওয়ার কথা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক শরীফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁদের জমিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে রয়েছে। এই জমি থেকে ধান কেটে তোলার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এবার এক মণ ধান কাটার জন্য শ্রমিকেরা ১০ কেজি করে পারিশ্রমিক চাচ্ছেন। আগে পাঁচ কেজিতেই তাঁরা ধান কেটেছেন। এবার ধানের দাম কম। তাঁদের নতুন ব্রি ২৮ জাতের ধান ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের দাম কম হওয়ার কারণে শ্রমিকেরা আগের দরে আর ধান কাটতে চাচ্ছে না। এই ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার কমে বিক্রি করলে তাঁদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। তিনি বলেন, তাঁর পৌনে তিন বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। কোনো কাজের লোক না পাওয়ায় তাঁরা নিজেরাই কাটছেন। দেখা যায়, তাঁরা এক গাড়ি ধান কেটে রাস্তার ওপরে তুলেছেন।

উপজেলার কদম শহরে গিয়ে দেখা গেল, মকবুল হোসেন কাজের লোক না পেয়ে তাঁর নিজের জমির ধান ছেলেকে সঙ্গে করে নিজেই কাটছেন। তিনি বলেন, ধানের ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা হতাশ। এখন ধান কেটে ঘরে তোলার আর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কাজ করলে শ্রমিকেরা ধান কাটার চেয়ে বেশি মজুরি পাচ্ছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হলে দাম বাড়বে। তখন কৃষকদের পোষাবে।