যেখানে পলিথিন, সেখানেই মেয়রের আগুন

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নিজ হাতে পলিথিন জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে দেন। সম্প্রতি শহরের নয়ানিকান্দা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নিজ হাতে পলিথিন জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে দেন। সম্প্রতি শহরের নয়ানিকান্দা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরকে পলিথিন মুক্ত করতে প্রতিদিন মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে নিজ হাতে পলিথিন জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে দেন। পরিবেশ রক্ষার্থে মেয়রের সঙ্গী হয়েছেন এলাকাবাসী। পলিথিন মুক্ত শহর গড়তে মেয়রের এই উদ্যোগ এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

পৌর শহরের বাসিন্দা ও পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে নালিতাবাড়ী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পৌরসভায় ২০১৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পৌরশহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়ক প্রস্থকরণ, ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এলাকাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি।

আবু বক্কর সিদ্দিক এবার শহর পলিথিন মুক্ত করতে নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে উপস্থিত হয়ে ব্যবহৃত, ফেলে দেওয়া পলিথিন নিজ হাতে সংগ্রহ করে একত্রিত করেন। পরে আগুন দিয়ে তা পুড়িয়ে দেন। তার সঙ্গে থাকা লোকজন পলিথিন পোড়ানোর কাজে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন শহরের ময়লা-আবর্জনা ট্রাকে করে শহরের নয়ানিকান্দা এলাকায় ফেলা হয়। সেখানে ময়লার স্তূপে থাকা পলিথিন মেয়র নিজ হাতে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করেন। এ সময় এলাকাবাসীও মেয়রের কাজে সহযোগিতা করেন।

ইতিমধ্যে পৌরশহরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কার্যালয়ের ভেতরে থাকা পলিথিন ও আবর্জনা একত্রিত করে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। গড়কান্দা, ছিটপাড়া, কালিনগর, চকপাড়া, তারাগঞ্জ উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ বাজার, নালিতাবাড়ী বাজার, তাওয়াকুলিয়া এলাকায়, আমবাগান, সার্জন আহাদ শিশু পার্ক এলাকাসহ নয়টি ওয়ার্ড পলিথিন মুক্ত করা হয়েছে।

মেয়রের কয়েকজন সমর্থক জানান, শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন মেয়র তার নিজ গাড়িতে করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ান। শহর পলিথিন মুক্ত করতে মেয়রকে সহযোগিতা করেন প্যানেল মেয়র সুরঞ্জিত সরকার, জেলা যুবলীগের সদস্য শামসুদ্দিন চঞ্চল, নালিতাবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলমসহ মেয়রের কয়েকজন সমর্থক।

পৌরশহরের শিক্ষক আর এ ফিরুজ বলেন, এলাকাবাসীকে সচেতন করতে মেয়রের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মেহেদী হাসান বলেন, মেয়র নিজে এবং কর্মচারীদের নিয়ে দিনব্যাপী কমপ্লেক্সের ভেতরে পলিথিন ও আবর্জনা একত্র করে আগুনে পুড়িয়েছেন। শহর পলিথিন মুক্ত করতে মেয়রের আন্তরিকতায় এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়েছেন।

মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব অনিয়মকে নিয়মের মধ্যে আনা খুব সহজ ব্যাপার। তার জন্য শুধু একটু সৎ ইচ্ছার প্রয়োজন। এখন সবকিছুতেই পলিথিনের ব্যবহার। পলিথিন মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফেলে। পলিথিন সহজে ধ্বংস হয় না। তাই পলিথিন মুক্ত করতে নিজ হাতে কাজ করি। আশা করি এলাকাবাসীও পলিথিনের কুফল সম্পর্কে সচেতন হবেন। তখন নিজেরাই পলিথিন মুক্ত করতে উদ্যোগী হবেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র সাহেব আমাদের জানালে আমরাও তার কাজে সহযোগিতা করতে পারি।’