'বোরকা পার্টি' গুজব, আতঙ্কে পাইকগাছাবাসী

সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা থেকে মোটরসাইকেলে পাইকগাছার দিকে যাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এস এম আশিকুজ্জামান। কপিলমুনির মাহমুদকাটি বাজার পার হওয়ার সময় হঠাৎ দেখতে পান রাস্তার পাশে কয়েকজন যুবক বাঁশের লাঠি হাতে দাঁড়ানো। সামনে যতই এগোতে থাকেন, লোকের সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। একেকটি দলে ৩০ থেকে ৫০ জন, সঙ্গে আছে দা, কুড়াল, শাবল, লাঠি। আর রাস্তার পাশের বাগানে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক নারী ও বাচ্চা। এভাবে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি দেখতে পান তিনি।

আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তায় এভাবে মারমুখী ভঙ্গিতে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতূহলবশত মোটরসাইকেলটি থামিয়ে এক বয়স্ক মানুষের কাছে কারণ জিজ্ঞাসা করি। তখন ওই তিনি জানান, ‘কয়েকজন সংঘবদ্ধ লোক এলাকায় ঢুকেছে বোরকা পরে, এরা বাড়ি ঢুকে ছোট বাচ্চা ও নারীদের অজ্ঞান করে টাকা-পয়সাসহ শরীরের মূল্যবান অঙ্গ নিয়ে যাচ্ছেন।’ এ সময় আশিকুজ্জামান তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যা তিনি বললেন তা নিজের চোখে দেখেছেন কি না? জবাবে ওই মানুষটি জানিয়েছিলেন, ‘দেখেননি তবে শুনেছেন।’

এভাবেই গত কয়েক দিন ধরে ‘বোরকা পার্টি’ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে পাইকগাছাবাসীর। বিশেষ করে কপিলমুনি, গদাইপুর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে ওই আতঙ্ক অনেক বেশি। ইতিমধ্যে থানা থেকে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। ওই ঘটনাকে গুজব বলে আখ্যায়িত করছেন তাঁরা।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এলাকায় কোনো অপরিচিত নারী বা পুরুষ দেখলেই মানুষ সন্দেহ করছে। বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হচ্ছে তাঁকে। বেশি সন্দেহ হলে ধরে থানায় সোপর্দ করছে। বিশেষ করে বোরকা পরা কোনো নারীকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলে সন্দেহ বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি।

কপিলমুনি গ্রামের পাশের হরিঢালী ইউনিয়নের হরিদাকাটি গ্রামের গৃহবধূ সাহানা আক্তার বলছিলেন আতঙ্কের কথা, যদিও এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তিনি নিজে দেখেননি। তিনি বলেন, শুনেছেন, নারী ও পুরুষেরা বোরকা পরে মাইক্রোবাস নিয়ে এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এরপর কোনো বাড়িতে উঠে প্রথমে সেই বাড়ির মানুষকে অজ্ঞান করে টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে ছোট বাচ্চাদেরও। এটা নিয়ে এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এলাকায় কোনো অপরিচিত মানুষের আনাগোনা দেখলেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে তাঁদের আতঙ্ক আরও বেশি।

পাইকগাছা উপজেলা ও আশপাশের এলাকার কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত মানুষের ঘোরাঘুরি বেশি দেখা যাচ্ছে। ওই অপরিচিত মানুষেরা রোহিঙ্গা হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। ওই অপরিচিত মানুষগুলো এলাকার মানুষের আতঙ্কের কারণ।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ঘটনাটি আসলেই গুজব। বোরকা পরে কেউ কোনো বাড়িতে হানা দিয়েছে বা বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে গেছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। থানায়ও কেউ এখনো অভিযোগও করেনি। তবে এলাকাবাসী কিছু অপরিচিত মানুষকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছে। আচরণ দেখে মনে হয়েছে তারা মানসিক ভারসাম্যহীন।

ওসি এমদাদুল আরও বলেন, আতঙ্ক ছড়ানোর পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে বোরকা পরা মানুষ ঘোরাঘুরি করছে বলে জানাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পুলিশ গিয়ে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। এলাকার মানুষও ওই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না। কোনো একটা সংঘবদ্ধ চক্র মানুষকে হেনস্তা করার জন্য ওই গুজব রটাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি। যেহেতু কোথাও ওই ধরনের কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি, তাই এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হতে মাইকিং করা হচ্ছে।