ঘুষের টাকাসহ দুদকের ফাঁদে সমবায় কর্মকর্তা

দুদক
দুদক

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে ঘুষ নেওয়ার সময় ফাঁদ পেতে দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই কর্মকর্তার নাম নৃপেন্দ্র নাথ দাস। আজ মঙ্গলবার দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল তাঁকে ধরতে এ অভিযান চালায়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গোদাগাড়ীর সরমংলা একতা মৎস্যচাষি সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন দুদকের উপপরিচালক বরাবর গত রোববার একটি লিখিত অভিযোগ করেন। আবেদনে তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাছ চাষ করেন। এ ছাড়া মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে তিনি সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। কিন্তু খাঁচায় মাছ চাষের জন্য সব সময় মাছের পোনা পাওয়া যায় না। পোনা পেতে হলে পুকুরের প্রয়োজন পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাঁর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন, যাতে তাঁরা পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করতে পারেন। সমিতি থাকলে উপজেলায় সরকারি খাসপুকুর ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্রে অংশ নেওয়া যায়। তারা সেই মোতাবেক সরমংলা একতা মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতি গঠন করেন। 

এই সমিতির নিবন্ধনের জন্য গত ১৩ মার্চ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। ওই দিনই সমবায় কর্মকর্তা তার আবেদনটি গ্রহণ করেন। কিন্তু নিবন্ধনের জন্য তিনি এবং তার কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক আবুল খায়ের ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে তাঁরা ফাইলে সই করবেন না বলে জানান। নিরুপায় হয়ে সমিতির সহসভাপতি মো. ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে নৃপেন্দ্র নাথ দাসের কথামতো তিনি আবুল খায়েরকে নগদ ৫ হাজার টাকা দেন। তাতেও তারা রাজি না হলে নৃপেন্দ্র নাথের কথামতো পরে আরও ২ হাজার টাকা আবুল খায়েরের হাতে দেন।

এরপরেও তারা সমিতির নিবন্ধনের ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। তাঁরা আরও ৮ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাকি টাকা না পেলে তাঁরা ফাইলে স্বাক্ষর করতে আপত্তি করেন। এভাবে তাঁরা তাঁকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকেন। দুদকের কাছে লিখিত আবেদনে আবদুল বাতেন বলেছেন, ঘুষ দেওয়া অপরাধ জেনেও তিনি নিরুপায় হয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও সহকারী পরিদর্শককে বাকি ৮ হাজার টাকা প্রদান করার সময় হাতেনাতে ধরার জন্য আবেদন করেন।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ৮ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় দুদকের দলটি ওই সমবায় কর্মকর্তাকে হাতে নাতে আটক করে। অভিযানে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন, মো. আল-আমিন, আমিনুল ইসলাম, উপসহকারী পরিচালক আবুল বাশারসহ ছয়জনের একটি দল অংশ নেয়।

এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন সমবায় কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ দাসের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘুষের ৮ হাজার টাকাসহ তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। পুলিশ তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাবে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, দুদক কর্মকর্তারা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নিয়ে থানায় এসেছেন।