কারাগারে বসেই খুনের নির্দেশ

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

ইয়াবা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি কারাগারে বসেই এক ব্যক্তিকে খুনের নির্দেশ দেন। কারণ, ওই ব্যক্তি তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন বলে সন্দেহ। এরপর নির্দেশমতো খুনও করা হয়। কিন্তু খুনের লক্ষ্য ভুল হয়ে প্রাণ যায় এক নিরীহ রিকশাচালকের। নগরের ডবলমুরিং থানার একটি খুনের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে।

ঘটনার শুরু গত ২৭ এপ্রিল। ওই দিন ডবলমুরিং থানার পুলিশ তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাগির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে ৫১০টি ইয়াবা, ১টি দোনলা বন্দুক ও ২টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাঁকে। ছাগির আগ্রাবাদ হাজীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা করতেন। ছাগির তাঁর কর্মচারী মফিজের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করতেন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছাগির তাঁর কর্মচারী মফিজকে সন্দেহ করেন। তাঁর ধারণা, মফিজই তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। কিন্তু ভুল করে মফিজ ভেবে খুন করা হয় রিকশাচালক রাজুকে।

গত বুধবার নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন শিমুল দাশ, তানভীর হোসেন, মো. সুমন, রাকিব হোসেন, নুরনবী, মেহেদী হাসান, ওসমান হায়দার ও সেলিনা আক্তার। সবার বয়স ১৮। এদের মধে৵ সেলিনা কারাগারে থাকা ইয়াবা মামলার আসামি ছাগির হোসেনের স্ত্রী।

গ্রেপ্তার আট আসামির মধে৵ শিমুল, তানভীর, সুজন ও রাকিব গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম খায়রুল আমীনের আদালতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ নাশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে বন্দীর সঙ্গে দর্শনার্থীদের সাক্ষাতের সময় জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারি রাখা হয়। সাধারণ বন্দীদের ওপর একটু কম নজরদারি রাখা হয়। কিন্তু কারাগারে বসে খুনের পরিকল্পনা করার সুযোগ নেই।

পুলিশ জানায়, ছাগির মাদকসেবী কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন। গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

>ইয়াবাসহ ধরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে খুনের পরিকল্পনা। জড়িত ৮ আসামি গ্রেপ্তার। ৪ জনের জবানবন্দি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আশিকুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই কিশোর। এরা ইয়াবাসেবী। কেউ দিনমজুর, আর কেউ গ্যারেজে কাজ করে। তাদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করতেন কারাগারে থাকা ছাগির।

পুলিশ সূত্র জানায়, ছাগিরকে দেখতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গ্রেপ্তারের পাঁচ দিন পর যান শিমুল, তানভীর ও রাকিব। কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষে তাঁরা কথা বলেন। ওই সময় ছাগির তাঁদের নির্দেশ দেন যেভাবেই হোক মফিজকে মেরে ফেলতে হবে। তাঁর কারণেই জেলে এসেছেন। এরপর কয়েক দফা কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষে আবার দেখা করেন আসামিরা ছাগিরের সঙ্গে। সবশেষে ১৩ মে ছাগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তারসহ আসামিরা সাক্ষাৎ করতে যান। ওই সময়ই মফিজকে মেরে ফেলার আবার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা মতো ওই দিন কারাগার থেকে এসে সন্ধ্যায় ছাগিরের বাসার সামনে স্ত্রী, ছেলে ওসমান হায়দারসহ আসামিরা বৈঠক করেন। আসামিদের টাকা, চাইনিজ কুড়াল, ছুরি ও কিরিচ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা মতো আসামিরা ফজরের নামাজের পর যে সময় লোকজন সাহ্‌রি খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন ওই সময়কে বেছে নেন। আসামি শিমুল, রাকিব, সিফাত ও সুজন অস্ত্র দিয়ে মফিজকে হত্যা করবে। আসামিরা মফিজের ভাড়া ঘর লক্ষ্য করে তাঁকে হত্যার জন্য ঢুকে। একপর্যায়ে মফিজ মনে করে আরেক ব্যক্তিকে হত্যা করে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশাচালক রাজু আহম্মদের লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু কেন কী কারণে কারা হত্যা করেছেন তা অজানা ছিল। তদন্তের একপর্যায়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের পর রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, মফিজ মনে করে আসামিরা রিকশাচালক রাজুকে খুন করে। মফিজকে খুন করার কারণ ইয়াবা মামলার আসামি ছাগির গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁকে সন্দেহ করে।