দীঘিনালার সঙ্গে দূরত্ব কমছে বাঘাইছড়ির

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দূরত্ব অর্ধেকে নেমে আসছে। এ জন্য দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের মাইনী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে সেতু। পাশাপাশি মাইনী নদীর পূর্ব পাড়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার নতুন সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সড়কের ইট বিছানোর কাজ শেষ হয়েছে।

বর্তমানে সড়কপথে দীঘিনালার সঙ্গে বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সেতু ও সড়ক নির্মিত হলে দীঘিনালা থেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি দূরত্ব দাঁড়াবে ২০ কিলোমিটারে। সেতু ও সড়ক তৈরি হলে কেবল বাঘাইছড়ির সঙ্গে দূরত্বই কমবে না বরং দীঘিনালার ১১টি গ্রামের বাসিন্দার যাতায়াতও সহজ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় এই সেতু ও সড়কের কাজ চলছে। মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সেতুর দরপত্রের কাজ সম্পন্ন করেছে। সেতুর পাশাপাশি মাইনী নদীর পূর্ব পাড়ে হচ্ছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও এলজিইডি যৌথভাবে সড়ক নির্মাণের কাজ করছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার ও এলজিইডি ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ২০০ কিলোমিটার সড়কে ইট বিছানোর কাজ শেষ করেছে।

মেরুং এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেরুং বাজারসংলগ্ন মাইনী নদীর পূর্ব পাড়ে ছোট হাজাছড়া, নেত্রজয় কার্বারিপাড়া, বাবুন্যা কার্বারিপাড়া, অঙ্গদা কার্বারিপাড়া, অনিন্দ কার্বারিপাড়াসহ মোট ১১টি গ্রাম রয়েছে। গ্রামগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। বর্ষায় তারা নদী পারাপার করে ঝুঁকি নিয়ে। সেতু হলে এই ঝুঁকি আর থাকবে না।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পূর্ব পাড়ের গ্রামের মানুষ দড়ি টানা নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে। সড়ক ও সেতু নির্মাণের খবর শুনে প্রত্যেকেই খুশি। পারাপারের এই সমস্যা আর পোহাতে হবে না তাদের।

সেতুর বিষয়ে জানতে চাইলে হাজাছড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সালের জুলাই মাসে নদীতে নৌকা নিয়ে মানুষ পারাপার করতে গিয়ে আমার বাবা লেদু মিয়া নৌকাডুবে নিখোঁজ হন। ছয় দিন পর আট কিলোমিটার দূরে বাবার লাশ পাই। নদীতে সেতু হলে আর কেউ নদী পার হতে গিয়ে ডুবে মারা যাবে না।’

হাজাছড়া গ্রামের সুফিয়া বেগম, বড় হাজাছড়া গ্রামের সনি চাকমা ও বীরবাহু কার্বারিপাড়ার কিরণ জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘আমরা ১১টি গ্রামের মানুষ শুষ্ক মৌসুমে কোনোরকম নদী পার হতে পারলেও বেশি বৃষ্টি হলে একরকম বন্দী হয়েই থাকতে হতো। সেতু নির্মাণের খবর শুনে খুব আনন্দ লাগছে। বর্ষা মৌসুমে গ্রামবাসীদের আর বন্দী হয়ে থাকতে হবে না।’

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাইনী নদীর পূর্ব পাড়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগর জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে কয়েক ধাপে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক ইট বিছানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এলজিইডি আরও দুই কিলোমিটারের মতো সড়কে ইট বিছানোর কাজ করেছে। সেতুর বাকি কাজও শুরু হবে।’

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী রূপক কান্তি সেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় মেরুং বাজার এলাকায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাইনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সেতুর দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া মাইনী নদীর পূর্ব পাড়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে সড়ক সংযোগের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৫ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ২০০ কিলোমিটার সড়কে ইট বিছানো হয়েছে। সেতু নির্মাণের কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ছোট মেরুং বাজার এলাকায় মাইনী নদীর ওপর সেতুটির কাজ শিগগিরই শুরু হবে। সেতুটি নির্মিত হলে বাঘাইছড়ির সঙ্গে দীঘিনালার ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে, তেমনি যাতায়াতে নিরাপত্তার ঝুঁকিও থাকবে না। বর্তমানে বাঘাইছড়ির সঙ্গে ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।