মধ্যরাতে রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত অংশের সদস্যরা। ছবি: প্রথম আলো
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত অংশের সদস্যরা। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশটি। বিক্ষোভকারীরা ‘বিতর্কিত’দের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন না করা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দেন।

রোববার দিবাগত রাত একটা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত অংশের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, যে কমিটিতে ‘বিতর্কিতরা’ রয়েছেন, সেই কমিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিলে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হবে।

এর আগে রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির সবাইকে নিয়ে সোমবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে বলে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশটি।

পদবঞ্চিতরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে স্লোগান দেন। ‘বিতর্কিতদের কমিটি, মানি না, মানব না’, ‘অছাত্রদের কমিটি, মানি না, মানব না’, ‘অবৈধ কমিটি, মানি না, মানব না’, ‘বিবাহিতের ঠিকানা, ছাত্রলীগে হবে না’, ‘প্রহসনের কমিটি, মানি না, মানব না’, ‘মাদকসেবীর ঠিকানা, ছাত্রলীগে হবে না’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে ছাত্রলীগ ছাড়’, ‘শিবিরের কমিটি, মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

পদবঞ্চিতদের এই অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা দলের জন্য, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ঘাম ঝরিয়েছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে সংগঠনের কমিটি করা হয়েছে। আমাদের যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, বিতর্কিতদের বাদ না দিয়ে এই কমিটি নিয়েই কাল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাবেন বলে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। বিতর্কিতদের নিয়ে ফুল দিলে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা করা হবে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন না করা পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির যাঁদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ঈদের আগেই বিতর্কিতদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে।

ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত ১৩ মে সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। এ ঘটনা নিয়ে আন্দোলনে নামেন পদবঞ্চিতেরা। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। মধুর ক্যানটিনের সেই ঘটনায় ২০ মে রাতে পাঁচজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।