রেস্তোরাঁ থেকে ফ্রিজ গায়েব হয়ে যাচ্ছে

>

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না ও খাবার পরিবেশন করার অপরাধে চারটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

রোজার শুরু থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ভেজালবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা। এসব অভিযানে রেস্তোরাঁগুলোর পরিবেশ ও খাবারের নিম্নতম মানের ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে। অভিজাত ও আকর্ষণীয় অন্দরসজ্জার রেস্তোরাঁগুলোর ফ্রিজে (রেফ্রিজারেটর) পাওয়া গেছে নিম্নমানের, পচা ও বাসি খাবার। নোংরা পরিবেশে খাবার রাখার কারণে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে রেস্তোরাঁগুলোকে।

এখন আদালতকে ফাঁকি দিয়ে জরিমানা এড়াতে নেওয়া হয়েছে কৌশল। রেস্তোরাঁ থেকে ফ্রিজই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তিনটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালাতে গিয়ে সেখানে মাছ ও মাংস সংরক্ষণ করে রাখার কোনো ফ্রিজ খুঁজে পায়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত

অভিযানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে গেলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা পচা–বাসি খাবার পাওয়া গেছে। রেস্তোরাঁগুলোকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। এসব ফ্রিজে রান্না করা খাবার ও কাঁচা মাংস একসঙ্গে সংরক্ষণ করা হতো; যা করা উচিত নয়। আবার পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন খাবারও পাওয়া যেত। তবে জরিমানা থেকে বাঁচতে এখন মালিকেরা রেস্তোরাঁ থেকে ফ্রিজ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন।

গতকালের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্বাহী হাকিম আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় তিনটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছেন। তবে কোনো রেস্তোরাঁয় ফ্রিজ খুঁজে পাননি। এর আগে যত রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়েছিল, সব রেস্তোরাঁতেই ফ্রিজ ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টায় বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় পানসি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে অভিযান চালাতে গেলে ভেতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ওই রেস্তোরাঁয় ফ্রিজ দেখতে চাইলে বলা হয়, তাঁরা প্রতিদিনের মাছ–মাংস প্রতিদিন রান্না করেন। তাই ফ্রিজ রাখার প্রয়োজন হয় না। পরে রান্নাঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রেস্তোরাঁটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর উত্তর বাড্ডা এলাকায় হজরত শাহ চন্দ্রপুরী হোটেল অ্যান্ড মিনি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়। ওই রেস্তোরাঁয় গত শনিবারের তৈরি করা মুরগির গ্রিল পাওয়া যায় ও রান্নাঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নজরে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানকেও ফ্রিজ কোথায় রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায়, খাবার সংরক্ষণ করার জন্য কোনো ফ্রিজ নেই। বেলা দুইটার দিকে মহাখালী এলাকায় ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। এখানেও রেস্তোরাঁয় ফ্রিজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্বাহী হাকিম প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা বলেন, প্রতিদিনের মাছ–মাংস তাঁরা প্রতিদিনই বিক্রি করেন। এ জন্য ফ্রিজ রাখা হয়নি।

পরে ওই রেস্তোরাঁয় বিএসটিআইয়ের অনুমতি ছাড়া দই উৎপাদন করা এবং উচ্চ আদালত থেকে বিক্রয়নিষিদ্ধ একটি পণ্য পাওয়ার কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ বনানী ১১ নম্বর সড়কে আড়ত সুপার শপে অভিযান চালিয়ে ফ্রিজে পচা মাছ খুঁজে পাওয়া যায়। জানতে চাইলে সুপার শপের কর্মকর্তারা বলেন, এসব মাছ ফেরত দেওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরে সুপার শপে বিধিবহির্ভূতভাবে সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী হাকিম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল চারটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযানের কারণে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। আগে রাসায়নিকমিশ্রিত খাবার পাওয়া যেত, এখন এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে অভিযান চলতে থাকবে।