নোয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-পদোন্নতিতে নিয়মভঙ্গ

সুবোধ কুমার সরকারকে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বাছাই বোর্ডের সভা হয়। তাতে সুবোধ কুমার ছাড়া আরও পাঁচজন প্রার্থী অংশ নেন। সাক্ষাৎকার শেষে ‘যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় সুপারিশ করা হলো না’ বলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। পরে ছয় মাসের চুক্তিতে থাকা সুবোধ কুমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ২০ মে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেন। ওই বছরের ২৩ মে তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ছয় মাসের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ সহকারী অধ্যাপক পদে বাছাই বোর্ডে অযোগ্য হলেও তিন মাস আট দিন পর তাঁকেই এক ধাপ ওপরের সহযোগী অধ্যাপক পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলো। তিনি এখন বিভাগের চেয়ারম্যান।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো বিভাগে ‘জালিয়াতি’ করে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে প্রথম হওয়া প্রার্থীকে বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক ধাপ ওপরের পদে। এসব ঘটনা ঘটেছে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বর্তমান উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের সময়ে।

অবশ্য উপাচার্য অহিদুজ্জামান বলেছেন, তাঁর মেয়াদকালে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। নীতিমালা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার খাতা জালিয়াতির বিষয়ে কেউ তাঁর কাছে অভিযোগও করেনি। ইতিপূর্বে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, সেগুলোও তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

বাছাই পরীক্ষার উত্তরপত্রে জালিয়াতি

শাখা কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি পাওয়া উপ-রেজিস্ট্রার আ শ ম শরিফুর রহমান প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে সবেতনে স্থায়ীভাবে পদায়নের অনুরোধ করে ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর আবেদন করেন, যার আলোকে গত বছরের ২৬ নভেম্বর উপাচার্য তাঁকে সহকারী অধ্যাপক পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে সহকারী অধ্যাপক পদে ১৪ জন এবং প্রভাষক পদে ৭৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। গত ১৯ মার্চ বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকারী অধ্যাপক পদে লিখিত পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর পেয়েও নিয়োগ পাননি এক নারী প্রার্থী। নিয়োগ দেওয়া হয় শরিফুর রহমানকে। কিন্তু উত্তরপত্রে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬, যা কাটাছেঁড়া করে দেখানো হয় ১০। অন্যদিকে ওই নারী প্রার্থীর নম্বর কাটাছেঁড়া করে দেখানো হয় সাড়ে ৭।

ওই নারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও তাঁকে মৌখিক পরীক্ষায় না ডাকায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন।

তিনটি দ্বিতীয় বিভাগ নিয়েও শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়ন নীতিমালা এবং ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি বা পদোন্নয়ন নীতিমালায় এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ বা জিপিএ ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫০ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি বা জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ থাকতে হবে বলে বলা হয়েছে। ক িন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনে তিনটি তৃতীয় বিভাগ পাওয়া প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ১৯৯২ সালে দাখিলে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এইচএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত তিনটি পরীক্ষার দুটিতে দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণিতে পাস করেন। অথচ তিনি নিয়োগ পেয়েছেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে।

একইভাবে শিক্ষাজীবনে তিনটি দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণি পাওয়া সাতক্ষীরার তালা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক দিব্যদুতি সরকারকে ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকার একটি কলেজ থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যাওয়া সৈয়দ আতিকুল ইসলামকে একই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক পদে ছয় মাসের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী যিনি যে পদ থেকে অবসর নেন, সে পদের সমপর্যায়ের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করতে পারেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে।