সোনা ব্যবসায়ী প্রবীর হত্যায় বন্ধুর মৃত্যুদণ্ডের রায়

নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারে সোনা ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যা মামলার রায়ে বন্ধু পিন্টু দেবনাথের মৃত্যুদণ্ড এবং তাঁর সহযোগী বাপন ভৌমিকের সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে অপর আসামি আবদুল্লাহ আল মামুনকে। আজ বুধবার বেলা দুইটায় জেলা ও দায়রা জজ মো.আনিসুর রহমান এই রায় দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন প্রথম আলোকে জানান, আদালত রায়ে পিন্টু দেবনাথকে মৃত্যুদণ্ড ও তাঁর সহযোগী বাপন ভৌমিককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে অপর আসামি আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

ব্যবসায়িক লেনদেনসহ নানা কারণে সোনা ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের প্রতি পিন্টু দেবনাথের ক্ষোভ ছিল জানা যায়। প্রবীরের পরিবার বংশ পরম্পরায় সোনা ব্যবসায়ী। আর পিন্টু সোনার দোকানের কর্মচারী থেকে দোকানের মালিক হন। এ নিয়ে প্রায়ই পিন্টু প্রবীরের কাছে হেনস্তার শিকার হতেন। এ ছাড়া প্রবীরের কাছে দোকান হারানোর ভয় কাজ করত পিন্টুর।

২০১৮ সালের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন প্রবীর ঘোষ। তিন দিন পর প্রবীরের মুঠোফোন থেকে তাঁর ছোট ভাই বিপ্লবের মুঠোফোনে ফোন করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় প্রবীরের বাবা ভোলানাথ চন্দ্র বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশ প্রবীর চন্দ্র ঘোষের নিখোঁজের ঘটনায় কালীরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু দেবনাথ ও তাঁর দোকানের কারিগর বাপন ভৌমিককে আটক করেন।

পুলিশের কাছে পিন্টু ও বাপনের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পিন্টুর ভাড়া বাসার সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীরের লাশ উদ্ধার করা হয়। নগরীর আমলাপাড়া ১৫ কে সি নাগ রোড এলাকার রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডুর মালিকানাধীন চার তলা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন পিন্টু। ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে তিনটি প্লাস্টিকের বস্তায় প্রবীরের মরদেহের পাঁচ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন বাড়ির পাশে ড্রেন থেকে দুই পা উদ্ধার করা হয়।

একই সঙ্গে স্বপন নামে আরেক ব্যক্তি হত্যার ঘটনায়ও পিন্টুর নাম উঠে আসে। স্বপন হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই অজিত কুমার সাহা বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় আটক রত্না রানী নামের এক নারীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি ও স্বপনের ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। রত্না রানী ছিলেন পিন্টু দেবনাথের বান্ধবী। দুজন এ হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।