বাড়তি ভাড়ার ফাঁদে যাত্রীরা

নৌপথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের এবারও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। প্রতিবছরই ঈদের আগে ও পরের ১৫ দিন বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। এবার লঞ্চগুলোতে ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গত ৩০ মে থেকে ঢাকা-বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে ঈদের বিশেষ সার্ভিস শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত এই সেবা চলবে। লঞ্চমালিকেরা বলছেন, যাত্রীদের কথা চিন্তা করে সারা বছর তাঁরা সরকার–নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম টাকায় যাত্রী পরিবহন করেন। ঈদের সময় যাত্রী বেশি হয়। আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁরা কিছুটা অতিরিক্ত ভাড়া নেন।

তবে লঞ্চভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি তুষার রেহমান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবে যে তাঁরা (লঞ্চমালিক) সারা বছর ভাড়া কম নেন, তা ঠিক নয়। বছরের অন্যান্য সময় যাত্রী কম থাকার পাশাপাশি লঞ্চগুলোর মধ্যে থাকে কঠিন প্রতিযোগিতা। ফলে ব্যবসায় টিকে থাকতে ভাড়া কম নেন তাঁরা। এতে তাঁদের লোকসান হয়, এমনটা নয়। লাভ একটু কম হয়। আর ঈদের সময় ঘরে ফিরতে ব্যাকুল মানুষ অনেকটাই জিম্মি থাকে লঞ্চমালিকদের কাছে। এই জিম্মিদশাকে পুঁজি করেই আদায় করা হয় সরকার–নির্ধারিত ভাড়ার নামে বাড়তি ভাড়া। ছয় সদস্যের একটি পরিবারকে যদি মাথাপিছু ৫০ টাকা বাড়তি দিতে হয়, তাহলে অতিরিক্ত গেল ৩০০ টাকা। আসা-যাওয়ায় ৬০০। নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের জন্য এটি সামান্য অর্থ নয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, বিশেষ সার্ভিস শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন পথে চলাচলকারী বেশির ভাগ লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু হয়। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোয় প্রকারভেদে ৫০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সারা বছর ঢাকা-বরিশাল লঞ্চগুলোয় ডেকে ২০০ টাকা ভাড়া হলেও এখন ২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বরগুনা-ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চগুলোয় কেবিন–ভাড়া কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, এখন তা ২ হাজার ৮০০ টাকা। ডেকে ৩৫০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা। আবার সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ টাকার স্থলে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আগে ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ছিল তিন হাজার টাকা। এখন তা পাঁচ হাজার টাকা। আগে ভিআইপি কেবিন–ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা, এখন সাত হাজার টাকা হয়েছে।

আমতলী-ঢাকা পথে আগে ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল দুই হাজার টাকা। এখন তা ২ হাজার ৪০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা। ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ভিআইপি কেবিন ভাড়া ছিল চার হাজার টাকা, এখন তা পাঁচ হাজার টাকা।

ঢাকা-পটুয়াখালী পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোয় সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। আর ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। একইভাবে ঝালকাঠি-ঢাকা পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

বরগুনার যাত্রী ইফতেখার শাহিন অভিযোগ করেন, বরগুনা-ঢাকা পথে সিন্ডিকেট করে লঞ্চভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখানে যাত্রীসেবা বলে কিছু নেই। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও কোনো সেবা পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় ছোট এসব লঞ্চে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। যাত্রীদের জিম্মি করে সিন্ডিকেট এসব করলেও দেখার কেউ নেই।

লঞ্চমালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘সারা বছর সরকার–নির্ধারিত লঞ্চের ভাড়া আদায় করা হয় না। ঈদে অনেক বাড়তি খরচ হয়। তা ছাড়া যাত্রী আনতে ডাবল ট্রিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবার খালি লঞ্চ চালিয়ে যেতে হয়। তাই লোকসান পোষাতে সরকার–নির্ধারিত ভাড়া আদায় ছাড়া উপায় থাকে না। তারপরও যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পুরো ভাড়া নিই না।’