তথ্য গোপন করে জামিন পেলেন পাঁচ আসামি

চট্টগ্রামে অপহরণের পর এক নারীকে ইয়াবায় ফাঁসানোর মামলার পাঁচ আসামি তথ্য গোপন করে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। আসামিরা ওই নারীকে অপহরণে সহযোগিতা করায় মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে বিচারাধীন। কিন্তু অপহরণের ধারাটি গোপন করে গত মে মাসে হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিন নেন। একই আদেশে হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কাছে জানতে চান কীভাবে মামলাটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।

পাঁচ আসামি হলেন মো. রাকিব, আলী শাহ, মো. শাহাবুদ্দিন, কামাল উদ্দিন ও নাছির উদ্দিন। রাকিব ওই নারীর স্বামীর আত্মীয়। বাকিরা পুরো ঘটনা সাজানোর সঙ্গে জড়িত। দুই পুলিশসহ মামলায় মোট আসামি ১২ জন। ২ জন পলাতক। জামিনে ৫ জন। বাকি ৫ জন হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট নগরের হালিশহরের বাসায় ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁকে সীতাকুণ্ড নিয়ে নির্জন একটি স্থানে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে পুলিশ ওই নারীকে ২ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের করা মাদক মামলায় কারাগারে যান তিনি। এরপর স্ত্রীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন স্বামী। আদালত ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে সে সময় স্ত্রীর জামিনের আবেদন করলে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিষয়টি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে ওই নারী জামিনে আছেন।

আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে দুটি সংস্থা এ বছরের শুরুতে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে কীভাবে, কেন ওই নারীকে ধর্ষণের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে, তার বর্ণনা রয়েছে। জড়িত আসামিদের কার, কী ভূমিকা ছিল, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। ডিবির প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে ২ পুলিশসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামি রাকিব, আলীসহ ৫ আসামি গত এপ্রিল মাসে আত্মসমর্পণ করলে ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর আসামিরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনে ওই নারীকে অপহরণে সহযোগিতা করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা গোপন করা হয়। সেখানে হত্যাচেষ্টাসহ কয়েকটি ধারা লেখা হয়। আসামিরা আবেদনে যেসব ধারা দিয়েছেন, সেই ধারা অনুযায়ী মামলাটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে চলতে পারে না। অথচ মামলাটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন দেখানো হয়। এরপর আসামিরা তথ্য গোপন করে জামিন নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

সরকারি কৌঁসুলি আরও বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নজরে এলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ চট্টগ্রামের বিচারক মো. মঈন উদ্দিনের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চান। ট্রাইব্যুনালে বিচারক ৯ জুলাই তিন পৃষ্ঠার লিখিত জবাব দেন। এতে বলা হয়, ৫ আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ধারাসহ অন্যান্য আইনের বিভিন্ন ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়া হয়েছে, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার এখতিয়ার সম্পন্ন। ট্রাইব্যুনালের বিচারকের লিখিত জবাব পাওয়ায় মহামান্য হাইকোর্ট পরবর্তী আদেশ দিতে পারেন। এখনো কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি।

৫ আসামি জামিন পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে জামিননামা দাখিল করেন আইনজীবী মুহাম্মদ আলী হাসান ফারুক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হাইকোর্টে জামিনের আবেদন তিনি করেননি। জামিন আদেশ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে জামিননামা দিয়েছেন। জামিনে থাকার কথা স্বীকার করে ৫ আসামির একজন শাহাব উদ্দিন এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

ওই নারীর স্বামী বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে এক আসামি ধর্ষণ করে। বাকিরা অপহরণ করে। পরে ইয়াবা দিয়ে মামলা দেয়।’