৭ টাকায় পুজোর জামা

পছন্দমতো একটি পাঞ্জাবি কিনছে এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো
পছন্দমতো একটি পাঞ্জাবি কিনছে এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো

মাঝ–আকাশ থেকে সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃষ্টিতে ভেজা পরিবেশে সূর্যের তেজ না থাকলেও যথেষ্ট আলো আছে। রমনা কালী মন্দির গেটের সামনে ছোট্ট একটি স্টল জামা-কাপড় দিয়ে সাজাচ্ছেন কয়েকজন। তখনই চোখে পড়ল উদ্যানে গেট দিয়ে হই-হুল্লোড় করে আসছে ৮-১০ জন পথশিশু। তাঁরা ভিড় জমিয়ে ফেলল সেই স্টলের সামনে। ‘আমার ওই জামাটাই চাই’, ‘আমার এই ফ্রকটা চাই, আপু’—এমন নানা বায়নায় উদ্যানের নীরবতা যেন ভাঙল।

নতুন জামা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে কথা বলল ৭ বছরের মীম। শহীদ মিনার এলাকায় ঘুরে ঘুরে সে ফুল বিক্রি করে। জানাল, ভার্সিটির এক আপু তাকে জানিয়েছে এখানে আসার জন্য। ‘এখানে নাকি ৭ টাকা দিয়ে একটা নতুন জামা পাওয়া যায়। আইসা দেখি সত্যিই তো! আমি আর আমার ছোট ভাইটার জন্য পছন্দ করে দুইটা জামা কিনলাম মাত্র ১৪ টাকা দিয়া’, বলছিল মীম।

মীমের মতো অনেক পথশিশু মাত্র ৭ টাকায় কিনতে পারছে নতুন সব কাপড়। রাজধানীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’ শীর্ষক এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে বিজয়া দশমী অর্থাৎ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই স্টল। ১ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রায় এক হাজার নতুন জামা নিয়ে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। আর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন পথশিশু এখান থেকে কিনছে নতুন জামা। তবে একটি শিশু একটি পোশাক কেনার সুযোগ পাবে।

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এর কর্মকর্তারা জানালেন, ফাউন্ডেশনের কয়েকটি উদ্যোগের একটি হলো ‘৭ টাকায় পুজোর বাজার’। ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন: ‘এক টাকায় আহার’, ‘এক টাকার চিকিৎসা’ ও ‘পাঁচ টাকায় স্যানিটারি প্যাড’ নামের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে অলাভজনক এ সংগঠনটি। শুভেচ্ছা মূল্য হিসেবে এই টাকা নেওয়া হয়, যেন ক্রেতার মনে কোনো হীনম্মন্যতা তৈরি না হয়। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানের অর্থে পরিচালিত হয় এসব কর্মসূচি। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এক স্বেচ্ছাসেবক সালমান খান বলেন, বাজার থেকে কেনার সাধ্য নেই, এমন সব মানুষের জন্যই এই কর্মসূচি। মাত্র ৭ টাকায় পথশিশুরা কিনে নিচ্ছে নতুন সব কাপড়। তারা যেন নিজেদের পছন্দমতো জামা কিনতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। আর নামমাত্র মূল্য দিয়ে তাদের মনে সন্তুষ্টিও আসে।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এবারের স্টলটি আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে করা হলেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নিম্ন আয়ের বাবা-মায়ের সন্তানেরাও পোশাক কিনতে পারবে।

জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন দিলীপ কুমার দাস। দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি এসেছেন পুজোর জামা কিনতে। ছবি: দীপু মালাকার
জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন দিলীপ কুমার দাস। দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি এসেছেন পুজোর জামা কিনতে। ছবি: দীপু মালাকার
স্টলে নতুন সব জামা সাজিয়ে রাখছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: প্রথম আলো
স্টলে নতুন সব জামা সাজিয়ে রাখছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: প্রথম আলো
এসব সাজিয়ে রাখা নতুন জামা পাবে শুধু সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই। ছবি: প্রথম আলো
এসব সাজিয়ে রাখা নতুন জামা পাবে শুধু সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই। ছবি: প্রথম আলো
পছন্দমতো একটি পাঞ্জাবি কিনছে এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো
পছন্দমতো একটি পাঞ্জাবি কিনছে এক শিশু। ছবি: প্রথম আলো
জামা কিনতে হলে ধরতে হবে লাইন। ছবি: প্রথম আলো
জামা কিনতে হলে ধরতে হবে লাইন। ছবি: প্রথম আলো
১ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য প্রায় এক হাজারটি নতুন জামা নিয়ে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। ছবি: প্রথম আলো
১ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য প্রায় এক হাজারটি নতুন জামা নিয়ে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। ছবি: প্রথম আলো