শূন্য ভিটায় খুঁজে ফেরেন একমাত্র সন্তানের স্পর্শ

কক্সবাজারের  উখিয়ার নিজ বাড়ির সামনে বিষণ্ন রোকন বড়ুয়া।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের উখিয়ার নিজ বাড়ির সামনে বিষণ্ন রোকন বড়ুয়া। প্রথম আলো

কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না প্রবাসী রোকন বড়ুয়ার। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে থাকলেও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে নির্ভার থাকতেন। মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু এক ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল সংসার। এক রাতেই খুন হলো মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তান। এখন শূন্য ভিটায় একাকী দিন কাটছে তাঁর। ঘর, উঠানে খুঁজে ফেরেন ছেলের স্পর্শ।

রোকেনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়াপাড়ায়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাঁর মা সুখী বড়ুয়া (৬৫), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়াকে (৬) গলা কেটে হত্যা করে। ২৬ সেপ্টেম্বর নিহত মিলা বডুয়ার বাবা শশাঙ্ক বডুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ১৪ দিন পর পুলিশ রোকনের ভাবী (বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী) রিকু বড়ুয়া (৩০) ও রিকু বড়ুয়ার ভাগনে জামাই উজ্জ্বল বড়ুয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার করে। দুজন বর্তমানে জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

ঘটনার ১৭ দিন পর ১২ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পিবিআই।

এ প্রসঙ্গে পিবিআই কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুললাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকাজ অব্যাহত আছে। পুলিশ যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে, আদালত তাঁদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আজ রোববার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পিবিআই।

একাকী রোকন

চার ভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট রোকন। সবার আলাদা সংসার। অষ্টম শ্রেণি পাস রোকন ২০০৫ সালে পাড়ি জমান কুয়েতে। ২০১১ সালের নভেম্বরে দেশে এসে তিনি বিয়ে করেন রামুর মেয়ে মিলা বড়ুয়াকে। ২০১৪ সালে তাঁদের সংসারে জন্ম হয় ছেলে রবিন বড়ুয়ার। সবশেষ তিনি বাড়িতে আসেন গত ৭ মার্চ। পাঁচ মাস পর ১ আগস্ট তিনি ফিরে যান কুয়েতে। সেখানে তিনি দর্জির কাজ করেন। কুয়েত ফিরে যাওয়ার ১ মাস ২৪ দিনের মাথায় ঘটে গেলে তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি।

গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির আঙ্গিনায় রোকন বড়ুয়ার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তখন তিনি একমাত্র ছেলের কথা বলে ক্ষণে ক্ষণে কাঁদছিলেন।

রোকন বলেন, চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেন। সেখান থেকে সরাসরি ছুটে যান কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে। সেখানে আগে থেকে রাখা ছিল তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলে ও ভাইজির মরদেহ।

একমাত্র ছেলের স্মৃতিচারণ করে রোকন বড়ুয়া বলেন, রবিনের সঙ্গে কথা হলেই গাড়ি আর খেলনা পিস্তলের বায়না ধরত। ঘরের এদিক–সেদিক পড়ে আছে ছেলের অসংখ্য খেলনা। কিন্তু রবিন নেই।

তদন্ত নিয়ে হতাশা

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, এত বড় ঘটনা, অথচ মানুষ সত্যটা জানতে পারছে না। খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিগগির পরিষদের উদ্যোগে তাঁরা সংবাদ সন্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেবেন।

রোকন বড়ুয়ার ভাষ্য, ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। খুনি শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কুয়েত যাবেন না। খুনি যেই হোক তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।